সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

ছিলো “মাতাল গ্রাম”, এখন দাবা খেলার নে’শা’য় বুঁ’দ গো’টা গ্রামবাসী, চ’ম’কে দিয়েছেন এই যুবক

ছোটবেলা থেকেই একটা কথা জেনে আসছি “ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়”। হ্যাঁ সত্যিই হয়, আর সেই জন্যই কেরালার এই গ্রামের যা বদনাম ছিল তা আজ সুনামে পরিণত হয়েছে। ‘মাতালদের গ্রাম’-এর নতুন নাম হয়েছে ‘দাবা গ্রাম’। ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছেন না তাই তো! চলুন তাহলে খুলে বলা যাক।

কেরালার মারোত্তিচাল গ্রাম, একসময় মাতাল আর জুয়াড়িদের ঠেক ছিল বললেই চলে। গ্রামের প্রত্যেক ঘরে-ঘরে, ক্লাবে, দোকানে, মাঠেঘাটে মদের আসর বসত। আর সেই কারণে এই গ্রামের দুর্নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে সেই গ্রামের ভোলবদল সত্যিই অবিশ্বাস্য।

এখানে আজ মদের বদলে ঘরে ঘরে দাবা খেলা হয়৷ ও৷ আর এহেন অবিশ্বাস্য বিপ্লবের কাণ্ডারি ওই গ্রামেরই এক যুবক, নাম উন্নিকৃষ্ণন। তারই প্রচেষ্টায় তাঁর জন্মভূমির দুর্নাম দূর হয়েছে।

আরো পড়ুন: চা বানানোর পর কি পাতা ফে’লে দিচ্ছেন? জানুন ৫ টি প্রয়োজনীয় ব্যবহার স’ম্প’র্কে

কে এই উন্নিকৃষ্ণন? এক সময় গ্রাম ছেড়ে অল্প দূরের এক ছোট্ট শহর কল্লুরে থাকতেন তিনি। মারোত্তিচালে তখন নেশাড়ুদের রাজত্ব। কল্লুরে থাকাকালীন উন্নিকৃষ্ণন দাবা শিখেছিলেন৷ গ্রাম ছাড়ার আসল কারণই ছিল দাবা শেখা। ছোটবেলাতেই দাবা খেলার প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন।

দাবা খেলাকে ভালোবেসেই কিংবদন্তি ববি ফিশারের অন্ধ ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। থাকতে শুরু করেছিলেন কল্লুরে। তারপর দাবা শেখার ইচ্ছে পূরণ হলে ফিরে আসেন গ্রামে৷

গ্রামে ফিরে বাড়ির কাছেই একটা চায়ের দোকান খোলেন উন্নিকৃষ্ণন৷ বলা ভালো, এখান থেকেই তাঁর বিপ্লবের শুরু। স্থানীয়রা যখন তাঁর দোকানে চা খেতে আসত তখন দাবা নিয়ে নানা মজার মজার গল্প করতেন উন্নিকৃষ্ণন৷ এভাবেই দাবা খেলা সম্পর্কে গ্রামবাসীদের তিনি প্রাথমিক ধারণা দিতে থাকেন৷

উন্নিকৃষ্ণনের আসল উদ্দেশ্য গ্রামবাসীরা ধরতে পারেন নি। প্রথম দিকে সেই যুবকের কথাকে কেউই সেভাবে পাত্তা দেয়নি। কিন্তু হাল ছাড়েননি উন্নিকৃষ্ণন৷

শুরুতে দাবায় এক-দু’জন আগ্রহী হয়ে দাবা খেলা শুরু করলেন। ওদের দেখাদেখি আরও কয়েকজন, তারপর আরও কয়েকজন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে দাবার নেশায় পড়লেন। অতএব শেষ অবধি কাজে দিল যুবকের গ্রাম বদলের স্ট্র্যাটেজি।

আরো পড়ুন: শক্তি বৃ’দ্ধি করে ধে’য়ে আ’স’ছে “অশনি”, দেখুন লাইভ অবস্থান

সূত্রের খবর, উন্নিকৃষ্ণন একাই তাঁর গ্রামের প্রায় সাতশো জনকে দাবা খেলা শিখিয়েছেন। মারোত্তিচালের নেশাগ্রস্ত মানুষেরা আজ মদ, জুয়ার নেশা ছেড়ে দিয়ে উন্নিকৃষ্ণননের মতোই দাবার প্রতি আসক্ত হয়েছেন।

দেখতে দেখতে গাঁয়ের প্রবীণরা, এমনকি মহিলারাও এই খেলায় শামিল হন। এমন অবস্থা হয় যে একদিনও দাবা না খেলে থাকতে পারেন না গ্রামের মানুষ৷

আজ উন্নিকৃষ্ণনের সেই চায়ের দোকান আর নেই। উপার্জনের জীবনে উন্নতি করে তিনি বর্তমানে একটি রেস্তরাঁর মালিক। তার নিজের গ্রামের সেই রেস্তরাঁতে চা-কফি থেকে শুরু করে টুকটাক খাবার পাওয়া যায়।

আর সেই রেস্তরাঁর সবথেকে বড় আকর্ষণ যে কোনও সময় রাজা-মন্ত্রী-হাতি-ঘোড়ার মেধাবী চালের সাথে শামিল হওয়া যায় দাবার বোর্ডে।