সম্প্রতি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এমন একটি ভিডিও যা মন কেড়েছে গোটা বিশ্ববাসীর। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে এক তরুণীকে কোলে নিয়ে নাচছেন এক যুবক। আর সেই তরুণীর কোনো পা নেই। ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যাচ্ছে, বিয়ের পর এই প্রথম নাচার সুযোগ পেলেন তাঁরা।
ইউক্রেনের লভিভ একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে তাঁদের এই নাচ কারণ, মাসখানেক আগেই তাঁদের জীবনে ঘটে গিয়েছে এক মারাত্মক বিপর্যয়। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের বলি ২৩ বছরের প্রাণবন্ত ওই তরুণীর দুটি পা।স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ওই তরুণীর নাম ওকসানা ব্যালানদিনা, তিনি পেশায় একজন নার্স।
তাঁর স্বামী ভিক্টর ভ্যাসিলিভ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের বাসিন্দা তাঁরা। গত ২৭ মার্চ তিনি এবং ভিক্টর দুজনে একসঙ্গে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময়েই রাস্তায় বিছিয়ে রাখা একটি মাইন দেখতে না পেয়ে তার উপরেই পা দিয়ে দেন ওকসানা। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণে দূরে ছিটকে যান তিনি।
আরো পড়ুন: আম কা’টা’র আ’গে জলে ভি’জি’য়ে রাখবেন কেন? রইলো বৈজ্ঞানিক কারণ
এই ঘটনায় ভিক্টরের কোনো ক্ষতি হয়নি ঠিকই, তবে ওকসানার দুটি পা-ই ব্যাপকভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তাঁর বাম হাতটিও কবজির নীচ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার পর এক মাসের বেশি সময় ধরে ওকসানা রয়েছেন হাসপাতালে, ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
❤️🇺🇦 Very special lovestory.
A nurse from Lysychansk, who has lost both legs on a russian mine, got married in Lviv. On March 27, Victor and Oksana were coming back home, when a russian mine exploded. The man was not injured, but Oksana's both legs were torn off by the explosion. pic.twitter.com/X1AQNwKwyu— Verkhovna Rada of Ukraine – Ukrainian Parliament (@ua_parliament) May 2, 2022
তবে তাঁর সেই ভয়ংকর ক্ষতিপূরণ কি আর সম্ভব? সেদিনের সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও ওকসানা ভয়ে আঁতকে ওঠে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি যতক্ষণে ওই মাইনটি দেখতে পেয়েছিলাম, ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। আমি কোনও মতে ভিক্টরকে চেঁচিয়ে সতর্ক করতে পেরেছিলাম।
সে যখন আমার চিৎকার শুনে ঘুরে তাকায়, ততক্ষণ বিস্ফোরণে আমি উড়ে গিয়েছি। আমি মুখ থুবড়ে রাস্তার উপর পড়ি। আমার মাথার ভিতরে তখন মারাত্মক শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। এরপরই আমি একটু ঘোরার চেষ্টা করি এবং নিজের পোশাক ছিঁড়তে শুরু করি। আমার মনে হচ্ছিল, জামা ছিঁড়ে ফেললে হয়তো আমি একটু হলেও শ্বাস নিতে পারব। কারণ, সেই মুহূর্তে আমি চারপাশে একটুও হাওয়া পাচ্ছিলাম না।”
আরো পড়ুন: KGF-2 এবার OTT-তে, কত টাকার চু’ক্তি হ’লো? শুনলে অ’বা’ক হবেন
বিস্ফোরণের মুহূর্তে ভিক্টর ওকসানার খানিকটা পিছনে ছিলেন। শুধুমাত্র সেই কারণেই তিনি রক্ষা পান। তাঁর কথায়, “যখন ঘটনাটি ঘটেছিল, আমার সেটা বুঝতে মাত্র এক মিনিট সময় লেগেছিল। ওকসানা মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। আমি জানি না, আরও কী হতে পারত। ও ভীষণ সাহসী। একবারের জন্যও অজ্ঞান হয়নি।
এমনকি আমি তখন কী করব, সেই বিষয়েও ওকসানাই আমাকে নির্দেশ দিচ্ছিল! এই ঘটনার পর আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব।
আমি দেখলাম ও আর নড়তে পারছে না! ওকে বাঁচাতে পেরেছি ঠিকই তবে চিকিৎসকদের পক্ষে ওর দুটি পা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় ছিল না।”
আরো পড়ুন: পরীক্ষায় ভা’লো নম্বর পেলেই ডেটিংয়ের সু’যো’গ! নিজেই প্রশ্ন তৈ’রি করেন এই যুবতী
অন্যদিকে, ওকসানা বারবার এক কথাই বলেছেন যে ভিক্টরই তাঁকে বাঁচার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এই দম্পতির ৭ ও ৫ বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। এই ঘটনার পর ওকসানাকে বিয়ে করেন ভিক্টর।
আর হাসপাতালের ভিতরেই সকলের উপস্থিতিতে সাদা গাউন পরা ওকসানাকে কোলে তুলে নাচেন তিনি। আর সেই দৃশ্য দেখে চোখে জল ধরে রাখতে পারছেন না নেটনাগরিকরা। সকলেই এই দম্পতিকে আগামী দিনে একে অপরের পাশে থেকে পথ চলার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।