বলিউডের বিগ বি- অমিতাভ বচ্চন। নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে লম্বা-চওড়া একটা মানুষ। মনে পড়ে একের পর এক তাক লাগানো সিনেমার কথা। যা দেখার জন্য সিনেমাহলে মানুষের ঢল, ব্ল্যাক টিকিট, একটা বিরাট ছবিতে লম্বা মালা এবং আরও কত কি! তিনি অনেক দুর্দান্ত ছবিতে কাজ করেছেন। তাঁর অভিনয়ের জোরে কোটি কোটি মানুষের মনে খুব কম দিনের মধ্যেই বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন।
দীর্ঘ অভিনয় জগতে তিনি বহুবার আঘাত পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, বহুবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও এসেছেন। কিন্তু আজও তাঁর দর্শকদের মনোরঞ্জনের ঘটা দেখলেই বোঝা যায় তিনি একজন বিশাল শক্তিশালী মনের মানুষ। কিন্তু তাঁর অনুরাগীরা তাঁকে এতটাই ভালোবাসেন যে তিনি যখন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন তখন তাঁর ভক্তরা হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করতেন প্রিয় অভিনেতার সুস্থতা কামনায়।
এই কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ছে ১৯৮৩ সালের একটি ঘটনার কথা। “কুলি” সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন বিগ-বি একটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার কবলে পড়েন এবং গুরুতর আহত হন। ওই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হয়েছিল তাঁর এবং তখন তাঁর তন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।তিনি কিছুদিন কোমায় চলে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন, কোনোভাবেই হয়তো আর তাঁকে বাঁচানো যাবে না। তখন তিনি দীর্ঘদিন মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করিয়েছিলেন।
তবে জানেন কি! সেই সময় সারাবিশ্বে অগুনতি ভক্তদের সাথে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী অভিনেতার সুস্থতা কামনায় ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী তখন আমেরিকায়। কিন্তু অমিতাভ বচ্চনের দুর্ঘটনার কথা জানার পরই তিনি তাঁর ছেলে রাজীব গান্ধীকে ভারতে পাঠিয়ে দেন।
তখন তো আর সোশ্যাল মিডিয়ার এতো ঘনঘটা ছিল না। তাই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর লেখা একটি বই থেকে এই ঘটনার বিবরণ জানা যায়। ইন্দিরা গান্ধী বইতে লিখেছেন, “যখন অমিতাভ বচ্চনের দুর্ঘটনা হয়, তখন আমি লস এঞ্জেলেসে ছিলাম। অমিতাভ বচ্চনের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানতে পেরে আমি আমার ছেলে রাজীব গান্ধীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। কিছুদিন পর আমিও ফিরে আসি ভারতবর্ষে এবং সম্পূর্ণ পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে দেখা করি।
তখন অমিতাভের শশুর তরুণ কুমার ভাদুরীর সঙ্গে দেখা হয় আমার। কিছুটা সুস্থ হতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে দেখা করি এবং অমিতাভও আমায় দেখে কেঁদে ফেলেন এবং বলেন, আমি কিছুতেই ঘুমাতে পারছিনা। তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে আমি বলি, আমিও মাঝে মাঝে ঘুমাতে পারিনা। এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই”।