ঈশ্বরের আপন দেশে বেগুনি-নীল ফুলের রঙের ছটা আপনারও দেখে মনে হতে পারে কোনো শিল্পী তাঁর তুলির ছোঁয়ায় সুন্দর ও যত্ন করে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে। কীসের কথা বলছি কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়ই। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন নীল-সাদা নীলকুরুঞ্জি ফুল। মুন্নারের এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যানে নীল-সাদা নীলকুরুঞ্জি ফুলের দেখা পাওয়া যায়। এক যুগ অন্তর এমন প্রাকৃতিক শোভা দেখার ভাগ্য হয় কেরালাবাসীদের। সম্প্রতি সেই সেই ছবি প্রকাশ্যে এসেছে।
কেরালার ইডুক্কি জেলার শালোম পাহাড়ে এই বিরল প্রজাতির ফুল ফোটে। দূর থেকে মনে হবে, বেগুনি-নীল-সাদা কুরুঞ্জি ফুলের চাদর গোটা শালোমকুন্নুতে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। তামিলনাড়ু ও কেরালার পশ্চিমঘাট পাহাড়ের শোলা জঙ্গলে এই বিরল ফুলের সারি দেখতে পাওয়া যায়। নীলগিরি পাহাড়ে এই বিরল ফুলের দর্শন মেলে, তাই এর নাম হয়েছে নীলকুরুঞ্জি। মালায়লাম ও তামিল ভাষায় এই ফুল নীলকুরুঞ্জি ও কুরুঞ্জি নামেও পরিচিত। নীলকুরুঞ্জির বিজ্ঞানসম্মত নাম Strobilanthes Kunthiana।
কোভিড অতিমারির কারণে এই উদ্যান বন্ধ ছিল। পর্যটকদের পাহাড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই ফুলকে ইডুক্কির বাসিন্দারা শুভ বলে মনে করেন। কোভিড পরিস্থিতির আগে এই বিরল প্রজাতির ফুলের দর্শনের জন্য পর্যটকদের অনুমতি দিয়েছিল বনদপ্তর। এই প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাক্ষী হতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে।
তথ্য বলছে ভারতে প্রায় ৪৬টি প্রজাতির নীলকুরুঞ্জি ফুল দেখতে পাওয়া যায়। পশ্চিমঘাট পাহাড়ের শোলা বনের প্রায় ৩০টি স্পটে এই বিরল ফুল দেখতে পাওয়া যায়। এই ফুল সাধারণত ১২ বছর অন্তর ফোটে। জানা গিয়েছে, Strobilanthes Kunthiana নামক প্রজাতির ফুল ফোটার জন্য ১২ বছর সময়ের প্রয়োজন।
গত মাসে, কিঝাককেথিল ও পুতত্তাদি পাহাড়ে এবং গত বছর, পশ্চিমঘাটের পুষ্পকান্দাম আনাক্কারা মেট্টু পাহাড়, তামিলনাড়ু ও মুন্নারের কাছে পুট্টাদির সীমান্তে নীলকুরুঞ্জি ফুলের সমাহার দেখা গিয়েছিল। ২০২১ সালের পর ফের ২০৩৩ সালে শোলা জঙ্গলে দেখা যাবে এই রঙিন নীলকুরুঞ্জি ফুল। ২০০৬ সালে তামিলনাড়ু ও কেরালায় প্রথম নীলকুরুঞ্জি ফুল দেখা গিয়েছিল। ১২ বছর পর এই ফুল দেখতে পাওয়ায় জুলাই-অগস্ট মাসে বহু পর্যটকের ভিড় হলে বনদপ্তর সতর্কভাবে সবটা নিয়ন্ত্রণ করে।
সাধারণত পশ্চিমঘাট পাহাড়ের গায়ে বিভিন্ন ঋতুতে এই বিরল প্রজাতির ফুলের চাদর দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া মুন্নারে সর্বশেষ ২০০৬ সালে কুরুঞ্জি ফুল ফুটেছিল । ঠিক ১২ বছর পর ২০১৮ সালে একই জায়গায় এই বিরল ফুল ফুটতে দেখা যায়। সুতরাং হিসাব বলছে, ২০৩৯ সালে ফের মুন্নারে এই স্বর্গীয় ফুল দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বছর বিরল ফুলের স্মরণে কেরালা রাজ্য সরকার একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ও এই বছরটি কুরুঞ্জির বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।