সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

মাত্র ৪৫ কিমি প’থ যে’তে সময় লাগাব ৫ ঘন্টা! কো’ন রেলপথে চ’লে এই ট্রেন?

ভারতের সবথেকে বড় যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো রেল মাধ্যম। এই রেল মাধ্যমকে নিয়ে আমাদের সর্বদা কৌতুহল অপরিসীম। কোন ট্রেন সর্বাধিক দ্রুতগামী হবে, কোন ট্রেন ভেঙে ফেলবে সমস্ত রেকর্ড তা নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। কিন্তু জানেন কি? পৃথিবীর মন্থরতম ট্রেন কোনটি? এই ট্রেন চলে কোন পথে? এই ট্রেনে চাপতে গেলে আপনাকে যেতে হবে প্রথমে তামিলনাড়ু। ট্রেনটি দেখতে অবিকল সিমলা টয় ট্রেনের মত। এই ট্রেন চলে তামিলনাড়ু রাজ্যের মেত্তুপালালাম থেকে উটি পর্যন্ত। ট্রেনটির নাম নীলগিরি প্যাসেঞ্জার।

ট্রেন্ডি যাত্রা পথে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার পাড়ি দেয় পাঁচ ঘন্টা ধরে। প্রতি ঘন্টায় ১০ কিলোমিটার গতি বেগে যায় এই ট্রেন। পর্বত সংকুল পথ দিয়ে যাওয়ার জন্য এই ট্রেনটি যথাসম্ভব কম গতিবেগে যায়। দেশের সর্বাধিক গতি সম্পন্ন ট্রেনের তুলনায় নীলগিরি প্যাসেঞ্জার ১৬ গুণ কম গতিপথ অতিক্রম করে। অরণ্য এবং পরবর্তী ঘেরা যে অঞ্চল দিয়ে এই ট্রেন যায়, তা একপ্রকার নৈসর্গিক শোভা সজ্জিত। মূলত প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য এই ট্রেন চাপেন যাত্রীরা।

ট্রেনটির গতি বেগ এবং যাত্রাপথের বিশিষ্টতার কথা মাথায় রেখে এই ট্রেনকে ইউনেস্কো তাদের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর তালিকা ভুক্ত করেছেন। এর আগে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে তথা বাঙালি প্রিয় টয়ট্রেনকে এই সাইটের তালিকা ভুক্ত করেছিল ইউনেস্কো। ভারতের সর্বাধিক ধীরগতি ট্রেন সম্পর্কে ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, নীলগিরি মাউনটেন রেলওয়ে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয়েছে।

প্রথমে ১৮৫৪ সালে এই ট্রেনটি তৈরি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু প্রতিগুলো আবহাওয়া এবং বিপথ সংকুল ভুপ্রকৃতির কারণে এই রেলপথ স্থাপনের কাজে বিলম্ব হয়। অবশেষে ১৮৯১ সালে এই কাজ শুরু হয় এবং ১৯০৮ সালে শেষ হয় এই কাজ।ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, নীলগিরি প্যাসেঞ্জার তার যাত্রাপথে ৩২৬মিটার থেকে ২,২০৩ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পথে ট্রেন চালানো সম্ভব হয়েছে।

রেলের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি তরফ থেকে জানা গেছে, ট্রেনটি মাত্র ৪৬ কিলোমিটার যাত্রাপথে একশটির বেশি সুরঙ্গ অতিক্রম করে। চারিদিকে চা বাগান, গহন অরণ্য এবং পাহাড় যাত্রীদের কাছে এই ট্রেন যাত্রা আরো বেশি উপভোগযোগ্য করে তোলে। যাত্রীদের একাংশ দের মতে, এই যাত্রাপথ সবথেকে আকর্ষণ জনক কারণেই যাত্রাপথে রয়েছে পাহাড়ি ঝরা, লম্বা চা বাগিচা যা নীলগিরি পর্বতের অপরূপ শোভাকে যাত্রীদের সামনে তুলে ধরে।

ট্রেনটি প্রত্যেকদিন সকাল ৭:১০ মিনিটে মেটটুপালায়লাম স্টেশন থেকে ছাড়ে ওটি পৌঁছয়ে দুপুর বারোটায়। আবার উঠে স্টেশন থেকে দুপুর দুটোয় ছাড়ে এবং বিকেল পাঁচটা ৩৫ মিনিটে পৌছয়ে মেটটুপালায়লাম। যাত্রাপথে কুন্নুর, ওয়েলিংটন, আরাভানকাদু, কেট্টি এবং লোভেডালে।

ট্রেনটি মূলত তিন কামরার কিন্তু জাতিসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চতুর্থ কামরাযুক্ত করা হয়েছে সম্প্রতি। ট্রেনটি প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরাযুক্ত। প্রথম শ্রেণীতে গদিওয়ালা আসন থাকলেও দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের বসতে হয় কাঠের আসনে। ছুটির মৌসুমী অথবা সপ্তাহের শেষে যাত্রীদের বিপুল চাপ সামলাতে হয় এই ট্রেনকে।