সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

মুদ্রাদো’ষ কা’টা’ন সময় থাকতেই, নাহলে বি’প’দ ঘ’ট’তে পা’রে আপনার জী’ব’নে

আমাদের চারপাশে আমরা অনেক বাতিকগ্রস্ত লোক দেখতে পাই। তাদের রোজকার কথা-বলা, হাঁটা-চলায় অস্বাভাবিকতা বেশ ভালোই প্রকাশ পায়। সে হয়তো বোঝে না, কিন্তু অন্যের চোখে তা ধরা পড়েই। সেগুলি হয় মূলত স্নায়ুর সমস্যার জন্যই। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় মোটর টিকস। এই সব মুদ্রাদোষ কি বা তার চিকিৎসার কথা জানালেন ন‌্যাশনাল মেডিক‌্যাল কলেজ হসপিটালের সাইকিয়াট্রিস্ট বিভাগের প্রধান ডা. সৃজিত ঘোষ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগ ১৮ বছর বয়সের আগেই আরম্ভ হয়। তবে সতর্ক হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এগুলি সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়। খুব অল্প ক্ষেত্রেই মুদ্রাদোষ প্রাপ্তবয়স্কদের দেখা যায়। এই বয়সে এমন রোগ শুরু হলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিরাময় সম্ভব। মুদ্রাদোষ থাকলে এই প্রতিক্রিয়ার উপর রোগীর কোনও নিয়ন্ত্রণ (ইনভলান্টারি) থাকে না, অস্বস্তির দূর করার জন্য শরীর নিজে নিজেই এমন সব অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া করে।

তোতলামি ও তার কারণ:

কথা আটকে যায় ও তার সঙ্গে রোগী একটা নির্দিষ্ট অক্ষর বা স্বরবর্ণ বার বার উচ্চারণ করতে থাকে। তোতলামি আবার কোনওরকম দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, গ্লানি, উত্তেজনা, রাগ বা উচ্ছ্বাসের কারণে বেড়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে এই রোগ প্রকাশ পায়। তবে গবেষণা বলে ৭০% ক্ষেত্রে শিশু বয়সে তোতলামি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। তবে এক বছর অবধি ঠিক না হলে বুঝে নিতে হবে যে স্পিচ থেরাপিস্ট ছাড়া এই রোগ সারানো সম্ভব নয়। খুব বিরল ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের এই রোগ থাকে। তোতলামির ক্ষেত্রেও রোগীর রোগের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না (ইনভলান্টারি)।

যাদের আমরা চলতি কথায় বলি শুচিবাই। যেমন, সবসময় নোংরা মনে করে একই জায়গা বা জিনিস বারবার পরিষ্কার করার প্রবণতা। এক্ষেত্রে রোগীর মাথায় বারবার একটা চিন্তা আসতে থাকে। যেটা হল অবসেশন। আর সেটাকে দূর করার জন্য রোগী বার বার একই কাজ করে যায় যেটা হল কম্পালশন। এই কম্পালশনের ক্ষেত্রে রোগী নিজের ইচ্ছায় সেসব ভাবে বা করে তার নানা ধরন রয়েছে।

অবসেশনাল থিমস অ‌্যান্ড রুমিনেশন : এক্ষেত্রে বারবার একটা চিন্তা ঘুরে ঘুরে আসে। কিছুতেই সেই চিন্তা সে মাথা থেকে দূর করতে পারে না। রোগী বার বার নিজের অতীতের কথা ভেবে ভুল করেছে বা যা তার করা উচিত ছিল করেনি এবং সেটা ভেবে অপরাধ বোধ, নিজের প্রতি রাগ বা অনুশোচনা জাগে।

বডি ডিসমর্ফিক ডিসঅর্ডার : এক্ষেত্রে রোগী মনে করে যে তার চেহারায় কোনো ত্রুটি আছে। নাকটা বাঁকা, বা চুলটা ঠিক ভাবে আঁচড়ানো নেই, হয়তো তার একটা চোখ অন্য চোখের চেয়ে ছোট ইত‌্যাদি নানা কারণে সে খুঁতখুঁত করতে থাকে।

হাইপোকোনড্রিয়াসিস : রোগী সবসময় মনে হতে থাকে তার গলায় কিছু একটা হয়েছে, বা তার পেটে কোনও একটা মারাত্মক রোগ হয়েছে।

অবসেশনাল ফোবিয়া : এক্ষেত্রে রোগীর সামনে ছুরি থাকলে তা দিয়ে খুন করে ফেলবে এমন একটা ভয় তার মধ্যে কাজ করে। মাঝে মাঝেই কোনো খারাপ কিছু ঘটিয়ে ফেলার চিন্তা মাথায় আসে।

অবসেশনাল ইম্পালস : এক্ষেত্রে গাড়িতে চাপলেই রোগীর মনে হয়ে যে সে চলন্ত গাড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে দেবে। কোনও সামাজিক বা ধার্মিক অনুষ্ঠানে গেলে তার মনে হতে পারে যে সে কাউকে গালাগালি দিয়ে ফেলবে। রাস্তায় চলার সময় লাইট পোস্ট ছুঁতে ছুঁতে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় এদের মধ্যে।

অবসেশনাল ডাউটস : এক্ষেত্রে রোগী একটা কাজ করে বারবার চিন্তা করে যে সেৎকাজটা করেছে কি না, যেমন- তালা লাগিয়ে বার বার তালাটা টেনে দেখা যে তালা ঠিক মতো লাগানো হয়েছে কিনা ইত্যাদি।

সোম্যাটিক অবসেশন : রোগীর মনে হয় যে তার শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া যেমন- শ্বাস নেওয়া, পলক ফেলা, খাবার খাওয়া, সব অঙ্গের অবস্থান, স্বাভাবিক চুলকানি, পেট ভর্তি হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সব কিছুর মধ্যেই কিছু একটা অস্বাভাবিকতা রয়েছে। অথচ চিকিৎসকের কাছে গেলে বা টেস্ট করলে দেখা যায় কোনো সমস‌্যা নেই।

কিন্তু এমন সব রোগের কারণ কী?

গবেষণায় বলে যে মস্তিষ্কের বেসাল গ‌্যাংলিয়ায় কোনও সমস‌্যা থাকলে এমন রোগ হতে পারে। এছাড়া আমাদের একটা স্নায়ু থেকে আরেকটা স্নায়ুর যোগাযোগের জন্য যে নিউরোট্রান্সমিটার (কেমিক‌্যাল ম‌্যাসেনজার) থাকে তাদের মধ্যে একটি রাসায়নিক পদার্থ সেরোটোনিনের মেটাবলিসম এর গন্ডগোলের ফলেও এমন হতে পারে।

রোগী বা তার আত্মীয়-পরিজন বুঝতে পারছে যে তার অবসেশন এবং কম্পালশন দুই ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা রয়েছে, চেষ্টা করছেন তা নিয়ন্ত্রণে আনার কিন্তু পারছেন না। অবসেশন জনিত ভাবনা চিন্তা বা কার্যকলাপ থেকে দৈনন্দিন জীবনযাপনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও রোগী সেই সব চিন্তা মাথা থেকে বের করতে পারেন না তাই মানসিক কষ্ট চলতে থাকে।

তাহলে এর চিকিৎসা কী?

কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি- এক্সপোজার উইথ রেসপন্স প্রিভেনশন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যার হাত ধোয়ার বাতিক আছে তাকে এই থেরাপি করা হলে প্রথমে অসুবিধা হলেও বারে বারে হাত ধোয়ার প্রবণতা কমতে থাকে।

ওষুধ- মূলত এসএসআরআই (সিলেক্টিভ সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর্স)- যার মধ্যে অনেকগুলি ওষুধ পড়ে। এই ওষুধগুলি থেরাপির সাথে সাথে চিকিৎসক প্রয়োজন মতো দিয়ে থাকে।