সন্তান সুখের থেকে বড় সুখ একজন নারীর জীবনে হয়তো আর কিছুই হতে পারে না। তাই সবাই না হলেও অধিকাংশ নারীই এই সুখ পাওয়ার জন্য রীতিমতো মরিয়া হয়ে ওঠেন। এরকমই এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটল গুজরাতের কচ্ছে। ৭০ বছর বয়সী এক মহিলা এক সুস্থ সন্তানের জন্ম দিলেন। মহিলার নাম জিভুবেন রাবারি। এক মাস আগে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে তিনি নিজের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। নাম রেখেছেন লালু।রাপার তালুকা এলাকার মোরা গ্রামের বাসিন্দা জিভুবেন রাবারি ও ভালজিবাই রাবারির ৪৫ বছরের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে তাঁদের কোনও সন্তান হয়নি। এবারই কোল আলো করে এসেছে পুত্র সন্তান। আর সেই কারণেই তাদের আনন্দের কোনও সীমা নেই।
ব্যাপারটি প্রথম দিকে চিকিৎসকদের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জের ছিল। কিন্তু জিভুবেনের দৃঢ় মনোভাবের জন্যই চিকিৎসকরা উদ্বুদ্ধ হন। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের মাধ্যমেই গোটা দেশের মানুষ এই খবর জানতে পেরেছেন। নেটিজেনরাও এই ছবি দেখে ওদের গল্প শুনে এককথায় অভিভূত হয়েছেন। একইসঙ্গে এই বয়সে মা হওয়ার এই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া ভালজিবাইকে ধন্য ধন্য করেছেন সকলে। সত্যিই তো যে বয়সে মহিলারা নিজের নাতি-নাতনির সঙ্গে খেলাধুলা করেন, সেই বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এ কিন্তু যে সে ব্যাপার নয়।
যদিও বয়স প্রমাণের কোনও কাগজপত্র তাঁদের কাছে ছিল না। তবে জিভুবেনের মতে, তাঁর বয়স ৬৫-৭০ বছরের মাঝামাঝিই হবে। আইভিএফ-এর মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার দৃঢ় আকাঙ্ক্ষার কথাও তিনি চিকিৎসকদের জানান। কিন্তু চিকিৎসকরা জিভুবেনকে এই বয়সে গর্ভাধারণের ঝুঁকি না নেওয়ার পরামর্শ দিলেও সন্তানের ব্যাপারে তিনি বেশ আবেগপ্রবণ ছিলেন। তাই চিকিৎসকদের নিষেধকে তিনি অগ্রাহ্য করেন।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নরেশ ভানুশালি বলেন, ‘আমরা প্রথমে ওষুধ লিখে তার মাসিক চক্রকে নিয়মিত করি। এরপর বয়সের কারণে সঙ্কুচিত জরায়ুকে চওড়া করি। পরবর্তীকে আমরা তাঁর ডিম্বাণু নিষিক্ত করি এবং ব্লাস্টোসিস্ট তৈরি করে জরায়ুতে স্থানান্তর করি।’ এর সপ্তাহ দুয়েক পর যখন চিকিৎসকরা সোনোগ্রাফি করেন, তখন সেখানে ভ্রূণের উন্নতি দেখে তাঁরা খুবই অবাক হয়ে যান। এরপর থেকে চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখেন। পরবর্তীতে যথাসময়ে হৃদস্পন্দন শনাক্ত হয় এবং তাতে কোনো ধরনের বিকৃতিও দেখা যায়নি। মায়ের কোনো কোমরবিডিটি না থাকলেও বয়সজনিত রক্তচাপের ঝুঁকি ছিল। তাই চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থার আট মাস পর একটি সি-সেকশন করেন। এখন শিশু এবং তার মা দুজনেই সুস্থ রয়েছেন।