ভারতের এবারে ভাগ্যটা সত্যিই খুব ভালো। একের পর এক পদক ভারতের ঝুলিতে আসছে।প্যারাঅলিম্পিক্সে এর আগে কোনোদিন টেবিল টেনিসে পদক জেতেনি ভারত। কিন্তু এবার সেই অসম্ভবকে সম্ভব করল গুজরাতের বাসিন্দা ভাবিনাবেন পটেল। এই প্যারাঅলিম্পিক্সে টেবিল টেনিসে অংশগ্রহণ করে বাজিমাত করেছেন তিনি, জিতেছেন রুপো।
ভারতে অলিম্পিক্স ক্রীড়াবিদদের যতটা পরিচিতি, তার সিকিভাগ পরিচিতি প্যারাঅলিম্পিয়ানদের নেই। ফেন্সার ভবানী দেবী যতটা পরিচিত, রুপো জয়ী ভাবিনা তার ধারে কাছে নেই। ভারতের হয়ে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন ৩০টিরও বেশি প্রতিযোগিতায়। বহু পদকও জিতেছেন। কিন্তু তবুও তার পরিচিতি সেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। তবে প্যারাঅলিম্পিক্সে সাফল্য লাভের পর তাঁকে চিনতে শুরু করেছে দেশের মানুষ।
ভাবিনাবেন পটেল- এর আসল পরিচয় কি! আসুন তা জেনে নেওয়া যাক। ১৯৮৬-র ৬ নভেম্বর গুজরাতের ভাডনগরে মেহসানা জেলার সুন্ধিয়া গ্রামে ভাবিনাবেনের জন্ম হয়। মাত্র এক বছর বয়সেই পোলিয়োয় আক্রান্ত হন তিনি। যার কারণে শরীরের নিচের অংশ ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যেতে থাকে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিল না তর মধ্যবিত্ত বাবা-মায়ের। তবু ভাবিনার বাবা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। পাঁচ জনের পরিবারের পুরো ভার তাঁর কাঁধে থাকলেও ভাবিনাকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তনমে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু সেই অস্ত্রোপচার কাজে লাগেনি। কারণ যে রিহ্যাব করতে দেওয়া হয়েছিল, তা ঠিক মতো অনুসরণ করেননি ভাবিনা।
There you have it!!! 🥈✨🇮🇳@BhavinaPatel6 wins the first medal of #Tokyo2020 @Paralympics for #IND !!!🏓
On our #NationalSportsDay 🎉#BhavinaPatel #silvermedal 🥈 #Praise4Para #Paralympics #UnitedByEmotion @Media_SAI @narendramodi @ianuragthakur @NisithPramanik @KirenRijiju pic.twitter.com/5yk4knCstg— Paralympic India 🇮🇳 #Cheer4India 🏅 #Praise4Para (@ParalympicIndia) August 29, 2021
ফলে খুব ছোট থেকেই হুইলচেয়ার তার সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। সুন্ধিয়া গ্রামে আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের সঙ্গে সাধারণ স্কুলেই পড়াশোনা শিখেছেন ভাবিনা। ২০০৪-এ তাঁর বাবা আমদাবাদের ব্লাইন্ড পিপল্স অ্যাসোসিয়েশনে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানে কম্পিউটার পড়ার পাশাপাশি স্নাতক হওয়া লক্ষ্য ছিল ভাবিনার। কিন্তু এখান থেকেই তাঁর জীবন হঠাৎ ঘুরে যায়। ব্লাইন্ড পিপল্স অ্যাসোসিয়েশনে পড়ার সময় লালা যোশীর সঙ্গে পরিচিতি হয় ভাবিনার। লালাই ভাবিনাকে পরামর্শ দেন ফিটনেস বজায় রাখতে টেবিল টেনিস খেলতে। শেখার ইচ্ছে ছোট থেকেই ছিল। ফলে খুব অল্প সময়ে খেলা আয়ত্ত করে নেন ভাবিনা।
তিন বছর কঠোর পরিশ্রমের পর ২০০৭-এ বেঙ্গালুরুতে প্যারা টেবিল টেনিসে জাতীয় খেতাব জেতেন। ২০০৯-এ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অভিষেক হয় তাঁর। তবে সাফল্য পেতে আরও দু’বছর লেগেছিল। ২০১১-য় তাইল্যান্ড ওপেন প্যারা টেবিল টেনিসে রুপো জেতেন তিনি। তখন থেকেই শুরু হয় তার জীবনের অন্য পথ চলা। দু’বছর পরে এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় রুপো জেতেন। সেটাও ছিল প্যারা টেবিল টেনিস ভারতের প্রথম রুপো।
এরপর জর্ডান, তাইওয়ান, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, স্লোভেনিয়া, তাইল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং মিশরে একাধিক পদক জিতেছেন। কিন্তু তখনও কাঙ্ক্ষিত সোনার পদক থেকে বঞ্চিত ছিলেন। শেষমেষ ২০১৯-এ ব্যাংককে প্যারা টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের জীবনের প্রথম সোনা পান। তার বক্তব্য অনুসারে যদি বয়স সঙ্গ দেয় তাহলে পরের প্যারালিম্পিক্সেও তিনি অংশ নিতে চান। তবে আপাতত টোকিয়োর সাফল্যতেই মেতেছেন তিনি।