সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

বা’স্ত’বে কি ছিল নোয়ার নৌকা? এই পাহাড়ে না’কি আছে নৌকার ধ্বং’সাব’শেষ? জানুন বি’শ’দে

বাইবেল’-এর ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এর ‘জেনেসিস’ পর্বে এক মহাপ্লাবনের বর্ণনা পাওয়া যায়। সেখানে মূল চরিত্র হলেন নোয়া বা নূহ্‌ নামের এক ব্যক্তি, যাকে আব্রাহামিক ধর্মগুলি (ইহুদি, খ্রিস্ট এবং ইসলাম) একজন নবি বা ঐশ্বরিক প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত মানুষ হিসাবেই মনে করা হয়। আর এই ব্যাক্তি মহাপ্রলয়ের আগে ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ পেয়ে এক সুবিশাল নৌকা বা আর্ক তৈরি করেন। সেই নৌকায় তিনি যাবতীয় প্রাণীর একটি করে যুগলকে স্থান দেন এবং সপরিবার সেই নৌকায় ঠাঁই নেন।

এরপর কি হলো কেউ জানে না কিন্তু বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে এই বিষয়টি নিয়ে। অনেকেই মনে করেন এই মহাপ্রলয়ের থেকে সৃষ্টিকে বাঁচিয়েছে এই নোয়ার নৌকা। আবার বাইবেলের ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’-এর ‘জেনেসিস’ পর্বে বলা হয়েছিল যে, মহাপ্লাবন থামলে নোয়ার নৌকা আরারত পর্বতে গিয়ে থামে। যদিও অন্যান্য প্রাচীন ইহুদি ধর্মপুস্তকে অন্য নামের পর্বতের কথা বলা হয়েছে, তবু বেশির ভাগ সন্ধানী আরারত পর্বতের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেন।

কিন্তু কোথায় এই আরারত পর্বত? মধ্যযুগে আর্মেনিয়ার (বর্তমানে তুরস্কের অন্তর্গত ভূখণ্ড) একটি পর্বতকে আরারত বলে ধরে নেওয়া হয়। ইহুদিদের আর এক প্রাচীন গ্রন্থ ‘বুক অফ জুবিলিজ়’ জানায় যে, নোয়ার নৌকা লুবার নামে এক পর্বতশৃঙ্গে গিয়ে ঠেকেছিল। লুবার আসলে আরারত পর্বতেরই একটি চূড়া।

আরো খবর: প্রাক্তণ স্ত্রীর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে জন্মদিন পা’ল’ন হৃত্বিকের, ছ’বি শে’য়া’র সুজানের

তবে খ্রিস্টধর্মের আদিপর্বে নোয়ার নৌকার অবশেষ আর্মেনিয়ার কোথাও রয়েছে বলে দাবি করা হতে থাকে। কিন্তু এর কোনও প্রমাণ কেউই দিতে পারেননি। খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে আর্মেনিয়ার সেন্ট জ্যাকব অফ নিসবিস নোয়ার নৌকা খোঁজার জন্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে এক কিংবদন্তি জন্ম নেয়।

জ্যাকবকে নাকি এক দেবদূত এসে দেখা দেন এবং নোয়ার নৌকায় পৌঁছতে সাহায্য করেন। আবার ১৬-১৭ শতকের ইংরেজ নৌসেনাপতি এবং অভিযাত্রী স্যর ওয়াল্টার র‍্যালি তাঁর ‘হিস্টোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ (১৬১৪) বইয়ের বার বার জানিয়েছেন, আরারত পর্বতকে শুধু মাত্র আর্মেনিয়ার একটি পাহাড় ভাবলে ভুল হবে, তা আসলে এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রসারিত এক পর্বতশিরা। স্যর র‍্যালির মতে, নোয়ার নৌকা প্রাচ্যের কোথাও গিয়েই ঠেকেছিল।

আবার ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরান অনুসারে নূহ্‌ নবি বা নোয়ার নৌকা এশিয়া মাইনরের আনাতোলিয়া অঞ্চলের জুডি পর্বতে গিয়ে ঠেকেছিল। কোরান-এ এই পর্বতকে ‘কার্দু’ নামে উল্লেখ করা হয়েছিল। আবার ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী জেমস ব্রাইস মাউন্ট আরারত সফর করেন এবং লেখেন যে, সেখানে ৪ ফুট লম্বা এবং ৫ ইঞ্চি পুরু এক কাঠের তৈরি কাঠামোর সন্ধান তিনি পেয়েছিলেন, যা তাঁর মতে প্রাকৃতিক নয়।

তিনি নোয়ার আর্ক হিসেবেই সেটিকে চিহ্নিত করেন এবং তার একটি টুকরো নিজের কাছে অভিযানের স্মারক হিসেবে রেখে দেন। এভাবে সময় এগিয়েছে এই নৌকা নিয়ে নানা গবেষণা এগিয়েছে কেউ কেউ বলেন এটা কোনো প্রাকিতিক নৌকো নয় কেউ আবার বলেন নোয়ার নৌকা বলে কিছু নেই।যেমন আমেরিকান মহাকাশচারী জেমস আরউইন ১৯৭০ এবং ১৯৮০-র দশকে নোয়ার আর্কের সন্ধানে আরারত পর্বতে অভিযান চালান।

আরো খবর: ভু’ল করে অন্য Account-এ টা’কা পা’ঠি’য়ে দিয়েছেন? ফে’র’ত পে’তে কি করবেন?

কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তাঁর অভিযান সফল হয়নি। মহাকাশচারী আরউইন তখন ঘোরতর ধার্মিক। তিনি মন্তব্য করেন যে, আর্কই তাঁদের সঙ্গে ছলনা করেছে। আবার অনেকেই এই নৌকার অস্তিত্ব আছে বলে তারা বিশ্বাস করেন। তবে মহাপ্রলয় বলে বিশ্বের বিভিন্ন পুরাণে যে কাহিনি বর্ণিত রয়েছে, তা যদি কখনও ঘটেও থাকে, তবে সেই আমলে কাঠ দিয়ে তৈরি কোনও নৌকার কাঠামো এত দিন টিকে থাকার কথা নয়।

 

নোয়ার নৌকা বেঁচে আছে মানুষের কল্পনায়-বিশ্বাসে-সাহিত্যে-চলচ্চিত্রে। যেমন জিশুর ব্যবহার করা পানপাত্র বা সিনাই পর্বতে মোজেসের পাওয়া দশটি প্রত্যাদেশের দু’টি প্রস্তরখণ্ড কোনোটাই আজ অবধি পাওয়া যায়নি। অথচ মানুষ বিশ্বাস করে যে এগুলোর অস্তিত্ব ছিল সবটাই নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী নির্ভর করে।