সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

ওষুধের মে’য়া’দ শে’ষ হ’লে ওই ওষুধটির কি করা হয়?

আমাদের দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা বেশ ব্যয়বহুল। শুধু আমাদের দেশ নয়। পুরো বিশ্ব, এবং বিশেষ করে আমাদের এশিয়ার দেশগুলো ছাড়াও আফ্রিকার দেশগুলোতে চিকিৎসা ও ওষুধের বেশ দাম। অনেক সময় জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়াও সম্ভব হয় না। ধরুন, আপনার প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে। ব্যথায় অতিষ্ট হয়ে বাসার তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছেন অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রফেন জাতীয় ওষুধ। খুঁজতে খুঁজতে আপনার টেবিলের ড্রয়ারে পেয়ে গেলেন এক পাতা ট্যাবলেট। ধরা যাক সেটা প্যারাসিটামল গোত্রের নাপা নামক ওষুধ। আপনি বেশ সচেতন মানুষ। তাই খাওয়ায় আগে ওষুধের মেয়াদ দেখে নিতে গেলেন। কিন্তু সেখানেই বিপত্তি। ওষুধের মেয়াদের তারিখ পার হয়ে গেছে কয়েক মাস আগে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিশ্চয়ই খাবেন না আপনি। সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়াই ঠিক না, সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খাবার সাহস নিশ্চয়ই হবে না আপনার।

কিন্তু, যদি আপনি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেতেন, তবে কী হতো? আপনার জীবন্ন বিপন্ন হতে পারত? নাকি যে কারণে ওষুধ খেতে যাচ্ছেন, সেই মাথাব্যথাই দূর হয়ে যেত? নাকি আপনার দেহে ভালো-খারাপ কিছুই ঘটতো না? এসব প্রশ্ন তো রয়েছেই। কিন্তু কখনও ভেবেছেন ওষুধের মেয়াদ কীভাবে পার হয়ে যায়? অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ক্যাপসুল বা ট্যাবলেটে কী ঘটে যে সেটা আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না? অনেক সময় জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়াও সম্ভব না হওয়ার পরও বিশ্বে প্রচুর ওষুধ নষ্ট হয়। এ সমস্যার কথা মাথায় রেখে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অনুরোধে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) একটি গবেষণা চালায়। সেনাবাহিনী তাদের কাছে দামি ওষুধের বিশাল এক চালান পাঠায়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ছিল, যেগুলোকে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বলে বাতিল করা হয়েছে।

আসলে সেনাবাহিনীকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ মেয়াদ শেষ হওয়া দামি দামি ওষুধ সংরক্ষণ করতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর কোটি কোটি টাকার সেসব ওষুধ ধ্বংস করে ফেলতে হয়। তাই এই গবেষণার মুখ্য বিষয় ছিল দুটো: সরকারের টাকা বাঁচানো এবং সেনাবাহিনীর কাছে জমা থাকা ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করে ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যায় কিনা সেটা খতিয়ে দেখা। এই গবেষণার অধীনে ৩০০ লট পরীক্ষা করা হয়, যেখানে ১২০ এর বেশি ওষুধ ছিল। গবেষণায় উঠে আসে, নষ্ট বলে চালিয়ে দেয়া শতাধিক ওষুধ তখনও ৯০% কার্যকর। এমনকি মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার ১৫ বছর পরও সেগুলো ব্যবহারযোগ্য!

এরপর, এমন ধরনের গবেষণা আরও হয়েছে, এবং সেসব গবেষণার ফলাফল এসেছে আগের মতোই। এজন্য, ১৯৮৬ সালে, মান ঠিক থাকা ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বাড়ানো যায় কিনা তা দেখার জন্য এফডিএ ‘সেলফ লাইফ এক্সটেনশন প্রোগ্রাম’ চালু করে। এবং এ প্রোগ্রামের ফলাফল অবিশ্বাস্য। অনেক ধরনের ওষুধের মেয়াদ আরও বাড়ানো যায় বলে তারা প্রমাণ পেয়েছেন, এবং এই ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ওষুধের মেয়াদও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাই, এই গবেষণা যদি এমন ফলাফল সামনে আনে, তবে মেয়াদ উল্লেখ করার প্রয়োজন কোথায়? আসলে ওষুধের গায়ে মেয়াদ উল্লেখ করার পেছনে মূল যে কারণ, সেটাই আমাদের জানাশোনার বাইরে। ১৯৭৯ সালে পাস হওয়া একটি আইনে বলা হয়, ওষুধ বানানোর কোম্পানিগুলোকে তাদের ওষুধের গায়ে মেয়াদ শেষ হবার একটি তারিখ দিতে হবে। এই তারিখ পর্যন্ত কোম্পানিগুলো তাদের ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার দায়ভার নেবে। উক্ত সময়ের পর ওষুধ গ্রহণ করলে কার্যকারিতা ও সম্পূর্ণ নিরাপত্তা না-ও পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই মেয়াদের অর্থ এমন নয় যে, গায়ে উল্লেখ করা দিনের পর ঐ ওষুধ একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে অথবা তার কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলবে।