১০ বছর আগের এক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যেই এই ঝলমলে পৃথিবীর সমস্ত আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে একরাশ অন্ধকার নেমে এসেছিল তার চোখের সামনে। চোখের সামনে মেয়েকে নিয়ে দেখা সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল মা-বাবারও। খুব ভেঙে পড়েছিলেন তারা। হিমানির বয়স তখন মাত্র ১৬ বছর।
সম্প্রতি সেই মেয়েই জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে কয়েক মিনিটে হয়ে উঠলেন কোটিপতি! কেবিসি ১৩-র প্রথম কোটি টাকা জয়ী তিনি। একটুর জন্য ৭ কোটি টাকা জেতার সুযোগ হারিয়েছেন।
আগ্রার বাসিন্দা হিমানি বুন্দেলা কেন্দ্রীয় সরকারের একটি স্কুলে অঙ্কের শিক্ষিকা। ২০১১ সালে তার জীবনে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনা থেকে দু’চোখে প্রায় দেখতে পান না। অনেক চিকিৎসার পর এখন মোটা কাচের চশমা পরে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতে পারেন। ডান চোখে হিমানি একেবারেই দেখতে পান না। বাঁ চোখে যেটুকু দৃষ্টিশক্তি ছিল, তাও হারিয়ে ফেলছেন ক্রমশ। বহু দিন হল বাঁ চোখে আবার গ্লুকোমা ধরা পড়েছে। চিকিৎসা চলছে। তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই পরিবারের।
সম্প্রতি কেবিসি সিজন ১৩-র একটি এপিসোডে অমিতাভ বচ্চনের মুখোমুখি বসে একটার পর একটা কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে এক কোটি টাকা জিতে নেন। শেষ যে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তিনি কোটিপতি হয়েছেন, তার জন্য কোনও লাইফলাইন ব্যবহার করেননি তিনি। নিজেই উত্তর দিয়েছিলেন।
শেষ প্রশ্নটি ছিল, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের গুপ্তচর হিসাবে ফ্রান্সে থাকাকালীন নুর ইনায়ত খান কী ছদ্মনাম নিয়েছিলেন?’ প্রশ্নের সঠিক উত্তরও দেন তিনি। তিনি অবশ্য পরের রাউন্ড অর্থাৎ সাত কোটি টাকার রাউন্ডটি খেলতে চাননি।
এই বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চান হিমানি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য একটি কোচিং সেন্টার খুলতে চান। সেই সমস্ত শিশুকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক সরকারি চাকরির জন্য তৈরি করতে চান।
অতিমারিতে সদ্য চাকরি হারিয়েছেন তার বাবা। তাই তাঁর জন্য একটি ব্যবসার কথা ভেবেছেন হিমানি। ভাই-বোনেদের ভবিষ্যতের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কে জমা রাখার পরিকল্পনাও করেছেন তিনি। আর নিজের জন্য কি করবেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘পরিবারই আমার সব কিছু। ওদের জন্য কিছু করতে পারলেই আমার ভাল লাগবে।’’
এত সবকিছুর মধ্যেও হিমানি কিন্তু দিব্যি বাঁচেন। তাঁর মতো বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগান অন্যদেরও। ক্লাসে ছাত্রদেরও হাসতে শেখান তিনি। হিমানির মুখে সব সময় এক অমলিন হাসি লেগে থাকে।