গোটা সাত বছর ধরে মঙ্গলের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে মম। ২০১৩ সালে পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল মম, মঙ্গলের বুকে নিজের পা রেখেছিল ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরে। চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, মঙ্গল অভিযান করার পরেই মঙ্গল যান নতুন করে একটি রাস্তা খুলে দিয়েছে। এরপরের মঙ্গল অভিযান করতে চলেছে ভারত ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে।
ইসরোর মার্স অরবিটার মিশন ২০২২ সালে আবার যাবে লালগ্রহের মধ্যে থাকা নানান রহস্যের খোঁজ নিতে। এর আগেও মম একবার মঙ্গল গ্রহতে পা রেখেছে, মমের চোখে ধরা দিয়েছে মঙ্গল ঠিক কেমন। ভারত প্রথম মঙ্গল যাত্রার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল ২০০৮ সালে, চন্দ্রযান ১ যাত্রা করেছিল মঙ্গলে এবং তারপরেই ইসরোর দ্বিতীয় মিশন অভিযানের কথা ঘোষণা করেন ইসরোর সেইসময়ের চেয়ারম্যান জি মাধবন নায়ার।
What is red, is a planet and is the focus of my orbit? pic.twitter.com/HDRWjOcPus
— ISRO's Mars Orbiter (@MarsOrbiter) September 24, 2014
যদিও সেইসময়ের মিশনকে কোন নাম করন করা হয় নি। পরবর্তীকালে কেরলের তিরুবনন্তপুরম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে ২০১০ সালে আবার মঙ্গল যাত্রার কথা ভাবেন। বিজ্ঞানীরা মঙ্গল যাত্রা সংক্রান্ত নানান বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করতে থাকেন,এরপর এই মঙ্গল যাত্রার নাম করণ করা হয় মার্স অরবিটার মিশন অর্থাৎ মম। ২০১৩ সাল যখন, ইসরোর চেয়ারম্যান কেপি রাধাকৃষ্ণাণ ঘোষনা করেন ‘মমের’ পৃথিবী থেকে মঙ্গলে যাওয়ার কথা।
এর পরেই ২০১৩ সালের ৫ ই নভেম্বর ‘মম’ পৃথিবী থেকে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। মঙ্গলের কক্ষ প্রদক্ষিন করে নানা রকম তথ্য সংগ্রহ করবে এটাই হ ‘মমের’ কাজ। ‘মমের’ শিরে পাঁচটি যন্ত্র রয়েছে, যা মঙ্গলের নানান রকমের তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। পাঁচটি যন্ত্র মার্স এক্সফেরিক নিউট্রাল কম্পোজিশন এনালাইজার, মিথেন সেনসর, লেম্যান অলফা ফটোমিটার, মার্স কালার ক্যামেরা, থার্মাল ইনফ্রাইড ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার। এই যন্ত্রগুলির সাহায্যে আবহাওয়া, মঙ্গলের চরিত্র, মাটির গঠন, মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব আছে কিনা, বায়ুমণ্ডলের নানান তথ্য সমস্ত কিছু বিষয়ে নজর রাখছে।
মঙ্গল যান ‘মমের’ তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, মঙ্গলে রাত এবং দিন হয়, ঋতু পরিবর্তন হয়, উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু বর্তমান, সেখানে পাহাড়-পর্বত, গিরিখাদ, নদীখাত এমনকি মঙ্গলে যে জল রয়েছে সেটার প্রমাণ দেয় ‘মম’। ২০১৫ সালের ১৪ই জুলাই ‘মম’ প্রথম মঙ্গলের ছবি তুলে পাঠায়। ‘মমের’ সবথেকে অন্যতম সাফল্য হলো মঙ্গলের উত্তর পশ্চিম অংশে গেইল ক্রেটার রয়েছে সেটার খোঁজ দেওয়া। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে লাল গ্রহ অর্থাৎ মঙ্গল হলো পাথুরে এবং বরফে ঢাকা কিন্তু সেই তথ্য একেবারেই ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছিল মঙ্গল যান ‘মম’। তার পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, কোটি বছর আগে মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধে ছিল অ্যারাবিয়া টেরা, যে স্থান থেকে প্রায় ৭০ হাজার কিলোমিটার বরাবর এলাকাজুড়ে ছিল বিশাল বড় নদী। মঙ্গলের সবথেকে বড় এলাকা হলো অ্যারাবিয়া টেরা।