মানুষ সমাজবদ্ধ জীব, সমাজ ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার কোন জায়গা নেই। এক এক সময় সমাজ সেই মানুষের কাছে ভয়ঙ্কর রূপ হয়ে দাঁড়ায়। সমাজের সেই ভয়ঙ্কর রূপ একটি পুরুষ এবং একটি নারীর কাছে আলাদা আলাদা রূপে ধরা দেয়। একটি সমাজে একা একটি পুরুষের পক্ষে বেঁচে থাকা যতটা সহজ তার থেকে বেশি কঠিন একজন নারীর সমাজে একা বাস করা।
কারণ একজন নারীর ওপর সবসময়ের সমাজের কুনজর থাকে। সমাজের কু নজর থেকে বাঁচাতে এক বিধবা মা তাঁর কন্যা সন্তানকে নিয়ে নতুন উপায়ে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, মেয়ে এবং স্বয়ং নিজে যাতে সমাজের আড়াল থেকে সুরক্ষিত থাকেন সেই জন্যেই এক আশ্চর্য কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
ঘটনাটি তামিলনাড়ুর, একজন বিধবা মা তাঁর কন্যা সন্তানকে মানুষ করার জন্য তিন দশক ধরে পুরুষের রূপে সমাজে বাস করছেন। এই জন্যই হয়তো বলে, মায়ের বিকল্প নেই! একজন মা তাঁর সন্তানের জন্য যেটা করতে পারে তা হয়তো আর কেউ পারেনা। বর্তমানে সেই মহিলার বয়স ৫৭ বছর। যাকে নিয়ে ইতিমধ্যে শোরগোল পড়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে।
আরো পড়ুন: বাড়ির মধ্যে ঘাপটি মে’রে ব’সে চিতাবাঘ, সামনে পেয়েই হা’ম’লা, ভাইরাল ভিডিও
কুড়ি বছর আগের কথা যখন পেচিয়াম্মল একজন তরুণী ছিলেন। তিনি এই থুথুকডি জেলার কাতুনায়াক্বানপট্টি গ্রামের একজন বাসিন্দা। বিয়ে হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর জীবনে অন্ধকার নেমে আসে, তার বিয়ের ১৫ দিনের মাথায় মারা যান তাঁর স্বামী, এর পরেই তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি গর্ভবতী।। অবশেষে সময়মতো তাঁর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় এরপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা।
অল্প বয়সী এক তরুণী নিজের এবং নিজের সন্তানের দিন কাটানোর জন্য কাজ খুঁজতে বের হন। বহু জায়গায় তাঁকে হেয় হতে হয়, সেই সময় তাঁর পাশে কেউ ছিল না। হঠাৎ করেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি পুরুষের ছদ্মবেশে থেকে সমাজের কুনজর থেকে নিজের সন্তান এবং নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
এরপরই শুরু হয় যুদ্ধ। নিজের নাম বদলে দিয়ে রাখলেন মুথু। কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল কেটে করে দিলেন ছোট। পুরুষদের মতই পড়তে শুরু করলেন শার্ট এবং লুঙ্গি। পরে যদিও অসুবিধা হয়নি নানান জায়গায় কাজ করে তিনি তাঁর সংসার চালাতেন। এরপর ওই পৌড়া জানান, আস্তে আস্তে যখন বিষয়টি স্বাভাবিক হয় তখন অনেকেই তাঁকে আন্নাচি বলে ডাকতেন।
অনেক সময় পুরুষের ছদ্মবেশে থাকার জন্য বাসে মহিলাদের বসার জায়গায় তিনি বসতে পারতেন না। সরকার মহিলাদের জন্য সেসময় বিনামূল্যে বাস যাত্রা করেছিলেন, কিন্তু তিনি পুরুষ সেজে থাকার জন্য তাঁর অর্থকষ্ট থেকে থাকলেও তাকে টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হত।
ভোটার কার্ড থেকে শুরু করে আধার কার্ড সমস্ত জায়গাতেই তাঁর পরিচয় একজন পুরুষ হিসেবেই। তাঁর এই চেষ্টা সফল তিনি নির্ভয়ে তাঁর মেয়েকে পড়াশোনা শেখাতে পেরেছেন বিয়ে দিয়েছেন। মুথু চান তিনি যেন পুরুষ হিসেবে সরকারি ভাতা প্রাপ্ত হতে পারেন। মধুর মেয়ে জানিয়েছে, তিনি চান মায়ের সমস্ত ইচ্ছাই যেন পূর্ণ হয়।