এই পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান রয়েছে যা আমাদের ধারণার বাইরে। এমনই একটি দ্বীপ রয়েছে মহারাষ্ট্রের মুরুদ সমুদ্র সৈকত থেকে কিছু দূরে আরব সাগরের মাঝখানে রয়েছে এই দ্বীপটি। মুরুদ সমুদ্র সৈকত অবস্থিত মহারাষ্ট্র রায়গর জেলায়। এই আশ্চর্য দ্বীপটির নাম হল জাঞ্জিরা। এটি ভারতীয় শব্দ নয়। আরবি ভাষা থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর অর্থ দ্বীপ। অনেকে একে মুরুদ জঞ্জিরা নামেও চেনে।
আপাতদৃষ্টিতে প্রচন্ড পরিমানে সুন্দর এই দ্বীপের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে একটি কালো ইতিহাস। বহু মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল একসময়। আহমদ নগর সুলতানের নৌসেনার কর্তা ছিলেন রাজা রাম রাও পাতিল।
আজও কিছু আদি জনজাতির সন্ধান পাওয়া যায় রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ,গুজরাট মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, এবং ওড়িশার বেশ কিছু জায়গায়। এই আদি জনজাতির মধ্যে অন্যতম হলো কোলি। এই জনজাতির অন্যতম রাজা ছিলেন রাম রাও।
ষোড়শ শতকে রাজা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার কথা ভেবে এই দ্বীপ তৈরি করেছিলেন এবং জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উচুঁ করে তৈরি করেছিলেন এই দ্বীপকে। এদিক গড়ে তোলার জন্য রাজাকে আহ্মদনগর সুলতানের অনুমতি নিতে হয়েছিল।
কিন্তু দিয়ে তৈরি করার পর এই সুলতানকে অমান্য করতে শুরু করে দেন রাজা। বিষয়টি আহমেদনগর সুলতানের একেবারেই পছন্দ হয়নি। তিনি জঞ্জিরা দখল করার জন্য তার এক বিশ্বস্ত সেনাপতিকে পাঠিয়েছিলেন সেই দ্বীপে।
কিন্তু দ্বীপ অনেকটা উঁচু হওয়ায় সরাসরি সেনা নিয়ে আক্রমণ করা সম্ভব ছিল না। তাই আহমেদনগর এর সুলতানের বিশ্বস্ত সেনাপতি পিরম খানকে ছলনার আশ্রয় নিতে হয়েছিল। পিরম নিজেকে ক্লান্ত বণিকের পরিচয় দিয়ে সেই দ্বীপে এক রাত কাটানোর অনুরোধ জানান রাজার কাছে। রাজি হয়ে যান রাজা। দ্বীপে পিরম এবং তার সহচরদের থাকার জন্য সম্মতি দেওয়াতে দ্বীপের সমস্ত বাসিন্দাদের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন পিরম। নানা রকম সুস্বাদু খাবার এবং পানীয়র আয়োজন করেছিলেন তিনি।
দ্বীপের সকলে যখন সেই অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছিলেন ঠিক তখনই সকলের খাবারে বিষ দিয়ে দেন পিরম। এরপর লুকিয়ে থাকা সেনাবাহিনীরা দখল করে নেয় ওই দ্বীপ। এই দ্বীপ দখল করার জন্য বহুবার পর্তুগিজ এবং ব্রিটিশরা চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০ ফুট উঁচু হওয়ার জন্য ব্যর্থ হতে হয়েছে সমস্ত সেনাবাহিনীকে।
আজ এই দিন পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। মুম্বাই থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে এই দ্বীপ। রাজাপুরি জেটি থেকে নৌকায় পৌঁছানো যায় এখানে। এই দ্বীপের প্রবেশপথ মাত্র একটি। চারদিকে সমুদ্রের জল নোনা জল দিয়ে ঘেরা থাকলেও দ্বীপে দুটি গভীর সুস্বাদু জলের রয়েছে যেটি ৬০ ফুট গভীর। দ্বীপ থেকে সমুদ্রের দিকে আজও একাধিক কামান তাক করে থাকতে দেখা যায়।