“অপরাধের শাস্তি কখনোই অপরাধ হতে পারে না”, তেমনি, “চোখের বদলে চোখ যদি নেওয়া হয় তাহলে হয়তো গোটা পৃথিবীটাই একদিন অন্ধ হয়ে যাবে” এরকমই মতামতের বিশ্বাসী ছিলেন গান্ধীজী। ২রা অক্টোবর জন্মদিন তাঁর, চলতি বছরে ১৫২ তম জন্ম দিবস । নমোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী থেকে মহাত্মা গান্ধী হওয়া পর্যন্ত এই মাঝের রাস্তাতে রয়েছে অনেক ঘটনা, যা তাকে মহাত্মা গান্ধীতে পরিণত করেছে।
” যদি তুমি পৃথিবীতে বদলাতে চাও, তাহলে আগে নিজেকে বদলাও”। শান্তি কামনার্থে জনগণের প্রতি তিনি বার্তা দিয়ে বলেছিলেন,” ভালোবাসা যেদিন ক্ষমতা এবং লোভকে হারিয়ে দেবে সেই দিনই পৃথিবীতে আবার নতুন করে শান্তি ফিরবে”। ১৫২ তম গান্ধীজীর জন্মদিনেই এমন কিছু অজানা তথ্য আছে যা আজও আমরা জানি না।
গান্ধীজী গোটা জীবনে অনেক পদযাত্রা করেছেন, যারা গান্ধী গবেষক তাদের মতে, গান্ধীজী যে পরিমাণ পথ হাঁটতেন সেই পরিমাণ পথ যদি কেউ হাঁটে তবে গোটা পৃথিবীকে সে দর্শন করে ফেলবে। গান্ধীজী অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে চিঠিপত্র আদানপ্রদান করেছেন। বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রধান ছিলেন রাশিয়ার সাহিত্যিক লিও তলস্তয়। জানা গেছে গান্ধীজী প্রচুর চিঠি লিখতেন তাকে।
গান্ধীজি হিটলারকেও চিঠি লিখেছিলেন এবং অনুরোধ করেছিলেন যেন যুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও গান্ধীজীর সেই চিঠি হিটলার পর্যন্ত আর পৌঁছায়নি, ব্রিটিশ সরকার সেই চিঠিটিকে আগেই বাজেয়াপ্ত করে দিয়েছিলেন। লন্ডন থেকে গান্ধীজী ব্যারিস্টারি পাস করেছিলেন অথচ আদালতে যদি তিনি কোনো কথা বলতেন তখনই তার হাত-পা কাঁপতো। তার বিপক্ষে যে উকিল রয়েছে সেই যদি কিছু বলতেন তার উত্তর গান্ধীজী দিতে পারতেন না।
গান্ধীজীর উকালতি পেশাটাকে বেছে নিতে পারেননি, এরপরই তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে পাড়ি দিয়েছিলেন। যখন তিনি লন্ডনে পড়াশোনা করতেন সেই সময় একদম সাহেবের মতোই পোশাক পরতেন, নাচ গান করতেন, এমনকি বেহালাও শিখতেন।
গান্ধীজী যেভাবে ইংরেজি ভাষা উচ্চারণ করতেন, তাতে আইরিশের টান ছিল কারণ প্রথম জীবনে তার যে শিক্ষক ছিলেন তিনি ছিলেন একজন আইরিশ। গান্ধী বিশেষজ্ঞদের দাবি প্রায় পাঁচ বার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন গান্ধীজী। স্বাধীনতা লাভ করার পর প্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর বক্তৃতার সময় লালকেল্লায় উপস্থিত ছিলেন না গান্ধীজী, কারণ তিনি সেই সময় কলকাতায় ধর্মীয় সংহতি বজায় রাখার জন্য উপস্থিত ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি সরলা দেবীকে নিজের কাছের মানুষ হিসেবে মনে করতেন, সরলা দেবীকে সাথে নিয়ে তিনি গোটা দেশ ঘুরে ছিলেন। অবশেষে যখন দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কথা ওঠে গান্ধীজী এবং সরলাদেবী একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়। গান্ধীজীর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বার তাঁকে খুন চেষ্টা করা হয়েছিল। গান্ধীজির মৃত্যুর পর তাঁর শেষকৃত্যেতে প্রায় উপস্থিত ছিলেন ১০ লক্ষ মানুষ এবং তাঁর জন্য শোক মিছিলে পায়ে হেঁটে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছিলেন তারা।