গ্রামটি হল কেনিয়ার সাম্বুরু এলাকার উমোজা গ্রাম। গ্রামটি গঠিত হয় ১৯৯০ সালে। ২৭ বছর ধরে এই গ্রামে শুধু নারীরাই থাকেন। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে উঠে এসেছে অনেক তথ্য। একসঙ্গে এই গ্রামে প্রথমে বসবাস শুরু করেন ১৫ জন ধর্ষিত মহিলা। তারপর এখানে বাল্য বিবাহ, সুন্নত এবং পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়া মহিলারাও এই গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়।
এই আশ্চর্য গ্রামটি প্রতিষ্ঠা করার কথা ভেবেছিলেন রেবেকা লোলোসোলি। তবে তার জন্য তাঁকে একের পর এক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এমনকি কঠিন শাস্তিও পেতে হয়েছিল তাকে। প্রথমে ৪ জন মহিলা নিয়ে তিনি জেদের বশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে এই গ্রামের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছর নিয়ম করে এই গ্রাম পরিচালনার দায়িত্ব বদল হয়। ২ জন প্রতিনিধি প্রতি বছর গ্রাম পরিচালনা দায়িত্ব পান। এখন এই গ্রামে বাচ্চা-সহ জন সংখ্যা মোট ৪০০। ছোটদের পড়াশুনো থেকে ঘরের কাজ সমস্ত কিছু শেখান গ্রামের মহিলারাই।
এখানে মহিলারা প্রত্যেকেই স্বনির্ভর। নিজেদের খাবার, কাপড় এবং বাড়ির জন্য নিয়মিত আয় করেন তাঁরা। ছোট ছোট ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত গ্রামের প্রতিটি মহিলা সদস্য। এঁদের হাতে বানানো গয়না বর্তমানে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। বহু দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসেন মহিলা পরিচালিত এই গ্রাম দেখতে। পর্যটকদের থেকে যে সামান্য প্রবেশমূল্য নেওয়া হয় তাতেই চলে এই গ্রাম উন্নয়নের কাজ।
এই গ্রামের বিশেষ বিষয়টি হল পুরুষদের এই গ্রামে বসবাস নিষিদ্ধ। ২০১৫ সালে এই গ্রামে মহিলাদের সংখ্যা ছিল ৪৭। এখন সেখানে প্রায় ২৫০ জন নারীর বসবাস। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, গত ৫০ বছরে এমন ৮৫টি রাজ্য রয়েছে যেখানে শীর্ষস্থানীয়ে কোনও মহিলা নেই। আর এখানে পরিচালনার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে সমস্ত কার্যনির্বাহের দায়িত্ব রয়েছে মহিলাদের উপর। এক কথায় সম্পূর্ণরূপে একটি মহিলা পরিচালিত গ্রাম।
উমোজা গ্রামের নারীরা গ্রাম থেকে বেরিয়ে নিজের পছন্দের পুরুষকে খুঁজে নেন এবং ওই ব্যক্তির সন্তান জন্ম দেন। তবে তারা একে অপরকে বিয়ে করেন না। সন্তানদের পড়াশোনার জন্য সেই গ্রামে এখন স্কুল গড়ে উঠেছে। সেই সাথে আছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।