৫০০ গ্রাম ঢ্যাঁড়শের দাম ৪০০ টাকা। শুনেই তো চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা! হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। তবে এই ঢ্যাঁড়শ সেই ঢ্যাঁড়শ নয়, যা আমরা বাজার থেকে কিনে এনে রান্না করি। বরং এই গাছের রং সবুজের বদলে লাল। আর এই নতুন প্রজাতির ঢ্যাঁড়শ চাষ করেই লাখপতি মধ্যপ্রদেশের এক চাষী মিশ্রিলাল রাজপুত। লাল রঙের এমন ঢ্যাঁড়শ চাষ করে রাতারাতি দেশবাসীকে তিনি চমকে দিয়েছেন। লাল রঙা বিরল প্রজাতির ঢ্যাঁড়শ চাষ করার কারণে তিনিই এখন আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু।
ওই চাষির বাড়ি মধ্যপ্রদেশের ভূপালের খাজুরি কালান। আমরা সাধারণত বাজার থেকে যে ঢ্যাঁড়শ কিনে আনি, তার দাম অনেক কম। হয়তো খুব বেশি হলে সেই ঢ্যাঁড়শের দাম কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকা । অন্যদিকে সবুজ ঢ্যাঁড়শের তুলনায় লাল ঢ্যাঁড়শের দাম প্রায় কুড়ি গুন বেশি। এই ধরনের ঢ্যাঁড়শ মাত্র ১ কুইন্টাল চাষ করলেই অন্ততপক্ষে লাখের কাছাকাছি উপার্জন হতে পারে।
মিশ্রিলালের বাড়ির কাছেই রয়েছে কয়েক বিঘা জমি। সেখানে চাষবাস করেই তারা জীবন-যাপন করেন। ওই চাষীর এমন পদক্ষেপের কারণ হল চাষ-বাসের ক্ষেত্রে অভিনবত্ব আনা। নতুনত্ব আনতে নতুন ধরনের এই লাল ঢ্যাঁড়শের চাষ করার কথা ভাবেন তিনি। নতুন প্রজাতির এই ঢ্যাঁড়শ চাষ করার জন্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউশন অফ ভেজিটেবিল রিসার্চ থেকে ট্রেনিং নিয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন এই ঢ্যাঁড়শ চাষ করার জন্য বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে।
পরবর্তীকালে মিসরিলাল বারানসি এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে কিনে এনেছিলেন ১ কেজি বীজ। সেই বীজ রোপণ করা শুরু করেন জুলাই মাসের প্রথম দিকে। এরপর ৪০ দিনের মাথায় লক্ষ্য করা যায় সেই সকল ঢ্যাঁড়শ বাড়তে শুরু করে। মিসরিলাল এই ঢ্যাঁড়শ চাষ করার জন্য কোন রকম রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননি বলে খবর।
Madhya Pradesh | Misrilal Rajput, a Bhopal-based farmer, grows red okra (ladyfinger) in his garden.
"This is 5-7 times more expensive than ordinary ladyfingers. It's being sold at Rs 75-80 to Rs 300-400 per 250 gm/500 gm in some malls," he says pic.twitter.com/rI9ZnDWXUm
— ANI (@ANI) September 5, 2021
মিসরিলালের উদ্যোগে ভারতের মাটিতে এই লাল ঢ্যাঁড়শ চাষ সম্ভব হয়েছে। সেই চাষী জানিয়েছে যে ঢ্যাঁড়শের এই প্রজাতিটি অফিশিয়ালি নাম কাশি লালিমা। এটি বসন্ত এবং গরমকাল ছাড়াও বর্ষাকালে এই ৩ কালেই চাষ করা যেতে পারে খুব সহজেই। ১ হেক্টর জমিতে ১৪ থেকে ১৫ টন কাশি লালিমা উৎপাদন করা সম্ভব। ভারতবর্ষে কাশি লালিমা হওয়ার আগে অবশ্য বিভিন্ন পশ্চিম দেশের দেশগুলি থেকে এগুলিকে আনা হতো। বিভিন্ন শপিংমলে এই ঢ্যাঁড়শের আড়াইশো গ্রাম বিক্রি হয় হয় ২৫০–৩০০ টাকার মধ্যে।
এই ঢ্যাঁড়শের গুণাবলীও রয়েছে অনেক। এই প্রসঙ্গে ওই চাষী জানিয়েছেন, “সবুজ ঢ্যাঁড়শের তুলনায় এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। যাদের হার্টের অসুখ রয়েছে কিংবা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই লাল ঢ্যাঁড়শ খুবই উপকারী। এরমধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে এবং রোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া এর মধ্যে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেশন ক্যাপাসিটি, এটি শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।”
এই চাষ করার ফলে স্বাস্থ্যের সাথে সাথে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নত হতে পারে। অনেক সময় বিদেশী অনেক শাকসবজির আগমন হয়। আমাদের খাবারের মধ্যেও সেই সমস্ত শাকসবজি সহজেই প্রবেশ করেছে। আমরা আমাদের দেশেই এই শাক সবজি গুলো ভালো করে চাষ করতে পারি, যেমন লাল-হলুদ ক্যাপসিকাম, লেটুস, স্ট্রবেরি, বেগুনি বাঁধাকপি, লেমনগ্রাস ইত্যাদি সব জিনিসই এখন ভারতবর্ষের মাটিতে খুব সহজেই জন্মায়। তাই লাল ঢ্যাঁড়শ জন্মানো খুব একটা অসম্ভব কিছু নয়।