করোনাভাইরাসের পর রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালসার অবস্থা সকলের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। একইসঙ্গে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হবার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল, বেড না পাওয়ার যে অসহায়তা, অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে যাওয়া, প্রতি মুহূর্তেই স্বজন হারানোর যে কষ্ট, তা গত বছর আমরা বেশ ভালো উপলব্ধি করতে পেরেছি। তাই রাজ্যগুলির স্বাস্থ্য কাঠামোকে শক্ত করার জন্য মোটা অঙ্কের সহায়তা করার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র।
পশ্চিমবঙ্গের জন্য এরই মধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এই অর্থ আগামী চার বছরের মধ্যে খরচ করতে হবে। দেশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার ৫১ কোটি টাকা। নবান্ন এবং স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রক জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের আওতায় রাজ্যগুলির স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামো কে শক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতে ন্যূনতম ৫ টি শয্যার ব্যবস্থা করা যায়, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং অ্যাম্বুলেন্সর ব্যবস্থা যেতে করা যায়, তার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডঃ অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যেই ৪ হাজার ৪০২ কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশ অর্থ গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে খরচ করা হবে। বাকি ৩৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা শহরাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে খরচ করতে হবে। এই প্রকল্পের সম্পন্ন করতে হবে পাঁচ বছরের মধ্যে। এতদিন পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতেন কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে ভেঙে গেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কাঠামো, তাকে পুনর্জীবিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য দপ্তর একটি রূপরেখা তৈরি করেছে ইতিমধ্যেই।১৩০০ টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে প্রাথমিকভাবে। সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য দপ্তরে রাখতে হবে সংক্রমণ রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলি নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পাঁচটি ১০০ টি শয্যার নতুন হাসপাতাল তৈরি করা হবে কোচবিহার জলপাইগুড়ি আরো বিভিন্ন জেলায়। প্রতিটি ব্লক হাসপাতালে দুটি করে এম্বুলেন্স এবং তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পিছু একটি করে অ্যাম্বুলেন্স কেনা হবে। এছাড়া স্বয়ংক্রিয় অক্সিজেন উৎপাদক প্লান্ট তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের কাছ থেকে। সব মিলিয়ে আগামী দিনে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছেন কেন্দ্র।