সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

সমাজকে পা’ত্তা না দি’য়ে আ’জ নিজ নিজ জা’য়’গা’য় প্রতিষ্ঠিত এই রূপান্তরকারীরা

যুগের পর যুগ ধরে রূপান্তরকামী মানুষদের খুব ছোট নজরেই দেখে এসেছে সমাজের তথাকথিত উচ্চশ্রেণীর মানুষেরা। তাঁদের প্রতি সবসময় কুমন্তব্য করা হত। তবে ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করা হল। রূপান্তরকামীদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর তাঁদের দীর্ঘদিনের লড়াই-এ প্রাপ্য মর্যাদা পেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সমাজের কুমন্তব্যের হাত থেকে তারা নিস্তার পায়নি। কিন্তু সমাজের কথা কানে নিয়ে লাভ কি!

সমাজ মানুষকে সবসময় ছোট করতেই শিখেছে। তাই একপ্রকার সমাজকে উপেক্ষা করেই একের পর এক রূপান্তরকামী মানুষ বিভিন্ন মহৎ কাজের মধ্য দিয়েই নজির সৃষ্টি করেছেন। আজকের প্রতিবেদনে আমরা এমনই কয়েকজন রূপান্তরিত ব্যক্তিত্বের কথা আপনাদের জানাতে চলেছি।

১) ডঃ মানবী বন্দোপাধ্যায়- ঈশ্বর তাঁকে এক পুরুষের শরীর দিয়ে পৃথিবীতে পাঠালেও নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে মনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৩ সাল লিঙ্গ পুনর্নিমাণ সার্জারি করান তিনি। এইভাবে সমাজের বুকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শুরু করেন তিনি। মানুষের মধ্যে রীতিমতো চর্চিতও হন মানবী। এরপর ২০০৫ সালে বাংলা সাহিত্যে পিএইডি অর্জন করলেন দেশের প্রথম রূপান্তরকামী এই মানবী। ২০১৫ সালে প্রথমবারের জন্য তিনি রূপান্তরকামী অধ্যক্ষ হিসাবে নিযুক্ত হন কৃষ্ণনগর ওম্যানস কলেজে। বর্তমানে তিনি ঢোসা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন। একটি সাক্ষাতকারে মানবী জানিয়েছিলেন যে, তাঁর এই মেয়ে-জীবনকে তাঁর বাবা কখনওই মানতে পারেননি। বারংবার তিরস্কার সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে, কিন্তু জীবনের লড়াইয়ে কখনও পিছিয়ে আসার কথা ভাবেননি মানবী। আজ হয়তো দীর্ঘ দিনের সেই সংগ্রাম অনেকটা অতিক্রম করতে পেরেছেন।

২) লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠি- ২০০৮ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের এশিয়া প্যাসিফিকের প্রথম রূপান্তকারী ভারতীয় প্রতিনিধি হলেন লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠি। রূপান্তরকামিতার জন্য ছেলেবেলা থেকেই বারবার অবহেলার শিকার হয়েছিলেন, তবে হেরে না গিয়ে অসম্ভব লড়াইও চালিয়ে গেছেন প্রতি মুহুর্তে। বর্তমানে একজন সমাজকর্মী হিসেবেও পরিচিত তিনি। রূপান্তরিত সম্প্রদায়ের উন্নয়নকল্পে তিনি ২০০৭ সালে ‘অস্তিত্ব’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন। তাঁর কথায়, ‘একজন রূপান্তরিত মহিলা হিসাবে তাঁরা যেন পুরুষের হাতের খেলনা। আমাদের শ্লীলতাহানি করা যায়, আমাদের অপমান করা যায়। লোকেরা আমাদের ছক্কা, হিজড়া ইত্যাদি বিভিন্ন অসম্মানজনক নামে ডাকতেও পারে। আমাদের সম্প্রদায়ে হাজার হাজার নির্ভয়া রয়েছে। আমাদের মধ্যে কতজনকে ধর্ষণ করে খুন করে দেওয়া হয় তা আপনারা জানেন পর্যন্ত না।’

৩) পদ্মীনি প্রকাশ- আর পাঁচজন রূপান্তরকামীর মতো পদ্মীনিও তাঁর পরিবারের কাছে চরম অবহেলিত হয়েছিলেন। নিজের মনের সঙ্গে বারবার লড়াই করে হাঁপিয়ে উঠছিলেন তিনি। তাই ১৩ বছর বয়সে আত্মহত্যা করতে যান। কিন্তু সমস্ত সমস্যাকে জয় করে পদ্মীনি ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি কোয়েম্বাটোরের একটি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলের প্রথম রূপান্তরকামী প্রাইম টাইম অ্যাঙ্কর হয়েছিলেন।

৪) ৬ প্যাক ব্যান্ড- এই ব্যান্ড হল ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী মিউজিক ব্যান্ড। রূপান্তরকামী মহিলার এই ব্যান্ডটি ২০১৬ সালে কানস গ্র্যান্ড প্রিক্স গ্লাস লায়ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

৫) কে প্রীতিকা ইয়াশিনি- কে প্রীতিকা ইয়াশিনি হলেন তামিলনাড়ুর প্রথম রূপান্তরকীমা পুলিশ অফিসার। বর্তমানে তিনি চেন্নাইয়ে সাব-ইন্সপেকটার হিসাবে কর্মরত। পুলিশবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য প্রতি মুহুর্তে লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। আবেদনপত্রে ‘রূপান্তরকামী’ হিসাবে যোগ দেওয়ার জন্য আইনি লড়াই পর্যন্ত লড়তে হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত তিনিই জয়ী হন।

৬) নিতাশা বিশ্বাস- ভারতের প্রথম রূপান্তরকামী বিউটি কুইন হলেন নিতাশা, যিনি২০১৭ সালে এই খেতাব অর্জন করেন।