জুতো কিনতে গেলে বাঙ্গালীদের অন্যতম প্রিয় পছন্দের স্থান হল শ্রীলেদার্স। কম দামে ভালো মানের জুতো মানেই শ্রীলেদার্স। কলকাতা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে শ্রীলেদার্সের বিভিন্ন শপিং মল। কিন্তু এই ব্র্যান্ডের মধ্যেই লুকিয়ে আছে স্বাধীনতা ঐতিহাসিক দলিল। চলুন জেনে নেওয়া যাক শ্রীলেদার্সের পেছনে লুকিয়ে থাকা সেই ইতিহাসের ঘটনা। স্বাধীনতার আগে মানুষের মধ্যে সেই ভাবে জুতো পরার প্রচলন ছিল না। একমাত্র ইংরেজরা জুতো পড়ে চলাফেরা করতেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল, বিপ্লবী সূর্যসেনের নেতৃত্বে ৬৫ জন দল ভারত কে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখছিলেন, তখনকার সময়ের চট্টগ্রাম লুণ্ঠনের ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। চট্টগ্রাম লুণ্ঠনের শেষে বিপ্লবী দল জঙ্গল থেকে শহরের দিকে রওনা হয়েছিল, তখন জালালাবাদের কাছে শুরু হয়েছিল প্রবল যুদ্ধ।
এই যুদ্ধের মধ্যে ৬৫ জনের দলে ছিলেন ২১ বছরের এক যুবক যার নাম সুরেশ দে। পুলিশের গুলিতে আহত হলে তাকে গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য, কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। পুলিশের কাছে ধরা পড়ে চলতে থাকে প্রবল অত্যাচার। পরবর্তীকালে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে ও গৃহবন্দি অবস্থায় থাকতে হয় তাকে। দেশ স্বাধীনের পর তিনি চলে আসেন জামশেদপুরে যেখানে কম দামে ভালো চামড়ার জুতো শুরু করেন তিনি। ১৯৫২ সালে, চামড়ার জুতো জনপ্রিয় হতে বেশি সময় নেয় নি। এটি দোকান থেকে তৈরি করা হলো আউটলেট, দোকানের নাম ছড়িয়ে গেল সারা দেশে।
১৯৯০ সালে ২১ মে, মারা গিয়েছিলেন সুরেশ দে। কিন্তু মৃত্যুর আগে তৈরি করে গেলেন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় জুতোর ব্র্যান্ড। তাঁর মৃত্যুর পর তার তিন ছেলে ব্যবসা দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো। সুরেশবাবু এক ছেলে সত্যব্রত কলকাতায় ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৫ সালে লিন্ডসে স্ট্রিটে তৈরি হয় প্রথম শ্রীলেদার্সের শোরুম। সেখান থেকেই শুরু যাত্রা। আজ কলকাতা থেকেই ব্যবসা পৌঁছে গেছে দিল্লি তথা মুম্বাইতে। শুধুমাত্র দেশে নয়, জার্মানি, গ্রিস এবং কুয়েতে ব্যবসা শুরু করেছে শ্রীলেদার্স।
তাই নিঃসন্দেহে শ্রীলেদার্স কি বলা যায় জীবন্ত ইতিহাসের দলিল। কোম্পানিতে অনলাইনে বলা হয়, ওয়াল্ড ক্লাস, রাইট প্রাইস। বাণিজ্যিকভাবে সফল শ্রীলেদার্সের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে অনেক কষ্ট এবং রক্ত যা সারা জীবন মানুষের মনে ইতিহাস হয়ে থাকবে।