সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

দু’র্ঘ’ট’না নাকি প্ল্যা’ন করে খু’ন, আজও অ’ধ’রা শ্রীদেবীর মৃ’ত্যু র’হ’স্য, জানুন প্রি’য় অভিনেত্রীকে

1963 সাল- আজ থেকে প্রায় অনেকটা বছর আগের কথা বলছি। সেই সময় দক্ষিণ ভারতে কোনো ঘরে কন্যাসন্তান জন্মানোই যেন পাপ ছিল। কারণ সেই কন্যাসন্তানের বিয়ে মানেই একগাদা পণ। দক্ষিণীদের কাছে কন্যাসন্তান যেন ছিল সংসারের অভিশাপ। ব্যতিক্রম ছিলেন না তামিলনাড়ুর মিনামপাত্তি গ্রামের আয়াপ্পন ও রাজ্যেশ্বরী । কিন্তু 13 ই অগস্ট তাঁদের জীবনে ঘটল বিভীষিকা, জীবনে যেন অন্ধকার নেমে এল। আয়াপ্পনের ঘরে রাজ্যেশ্বরীর কোল আলো করে জন্ম নিল এক ফুটফুটে কন্যা। নাম শ্রীআম্মা আয়েঙ্গার । আয়াপ্পন ছিলেন পেশায় আইনজীবি। তবুও কন্যাসন্তানের জন্ম কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি।

অপরদিকে রাজ্যেশ্বরী তখন দুই সৎ ছেলের মা। তিনিও খুশি হননি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে, কারণ তিনি ভেবেছিলেন তাঁর গর্ভে পুত্র হলে তবেই সম্পত্তির অধিকার বজায় থাকবে। তবে আয়াপ্পন মানিয়ে নিয়েছিলেন। শ্রীআম্মাকে তিনি ভালোবাসলেও মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল তাকে। চার বছরের শ্রীআম্মার হাত থেকে পুতুল ছিনিয়ে নিয়ে টেনে-হিঁচড়ে রাজ্যেশ্বরী নিয়ে গেছিলেন সিনেমার স্টুডিওয়। চারবছরের শ্রীআম্মাকে রোজগার করাতে চেয়েছিলেন। একরত্তি শ্রীআম্মা বারবার চেয়েছিল স্কুল যেতে, বন্ধুদের সাথে খেলতে। কিন্তু স্পটলাইটের আলো, চড়া মেকআপ হয়ে উঠল ছোট্ট মেয়েটির নিত্যসঙ্গী।

কাজের অভাব হল না মিষ্টি শ্রীআম্মার। ততদিনে তার আরও একটি বোন হয়েছে। আয়াপ্পনও পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। শ্রীআম্মা বোনের বেলায় এত কড়া নিয়ম কখনোই ছিল না। মা বোনকে ভালোবাসেন। শ্রীআম্মার রোজগারের সব টাকা রাজ্যেশ্বরী তাঁর আত্মীয়ের কাছেরাখতে শুরু করেন। একের পর এক হিট ফিল্মের মাধ্যমে শ্রীআম্মা ততদিনে কৈশোরে পৌঁছে গিয়েছে। এখন তার সংসার করতে ইচ্ছে হয়।

মনে হয়, এমন কেউ যদি তার জীবনে থাকত যে তাকে ভালোবাসবে, আগলে রাখবে। তার নিজের সংসারে সারাদিন নিজের মতো করে কাটাবে। কিন্তু তখনও মুক্তি মেলেনি তাঁর। বাড়িতে থাকতে গেলে উপায় করতে হবে। মা শ্রীআম্মার প্রতি কড়া নজর রেখেছেন। মেয়ে এখন নামী নায়িকা। নায়করা তার পিছনে ঘুরছে। মেয়ে বিয়ে করে ফেললে যদি তাঁর অর্থের যোগান বন্ধ হয়ে যায়! সেই কারণেই সরে যেতে হল কমল হাসান কে।

এখন আর সে ‘শ্রীআম্মা’ নয়, সে নামকরা শ্রীদেবী। বম্বে থেকেও একের পর এক অফার আসতে শুরু করেছে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণে হয়েছে নানা অপারেশনও। মোহময়ী নায়িকায় পরিণত হয়েছে সে। 1979 সালে মুক্তি পেল ‘ষোলবা সাওন’। কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় শ্রীদেবীর হিন্দি বলার স্টাইলে বলিউডে হাসির রোল উঠল। শ্রীদেবী সাউথ ইন্ডিয়া ফিরলেন।

নিজে নিজে হিন্দি শিখতে শুরু করলেন। বনির প্রযোজনায় শ্রীদেবী ফিল্মে অভিনয় করতে শুরু করেন। তখন তাঁর হাতে একটি পয়সাও নেই। মা যে আত্মীয়ের কাছে টাকা রাখতেন, তাঁরা সব আত্মসাৎ করেছেন। বোন পালিয়ে বিয়ে করেছে এক অযোগ্য ছেলেকে। শ্রীদেবীর উপর এসে পড়েছে আর্থিক দায়িত্বভার। পাগলের মতো কাজ করছেন শ্রীদেবী।

এই সুযোগ কাজে লাগালেন বনি। একাকী শ্রীদেবীর জীবনে তাঁর প্রেমিক হয়ে দেখা দিলেন তিনি। তাঁকে বিশ্বাস করলেন শ্রীদেবী। কিন্তু সহবাসের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেন তিনি। শ্রীদেবী ঠিক করলেন, সন্তানের জন্ম দেবেন। কিন্তু বনি ও তাঁর স্ত্রী মোনার বিবাহ বিচ্ছেদ চাননি শ্রী। তাই বনির বাড়িতে এই ব্যাপারে কথা বলতে পৌঁছালে গর্ভবতী শ্রীদেবীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেন বনির মা। ততদিনে শ্রীদেবীর মা বলতে শুরু করেছেন সন্তানটিকে নষ্ট করে দিতে। এই প্রথমবার নিজের মনের কথা শুনলেন শ্রী। অপরদিকে বনি ও মোনার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য সবাই দায়ী করছে তাঁকে। চুপ থাকলেন তিনি।

ইতিমধ্যে মারা গেলেন শ্রীদেবীর মা। মায়ের মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় বনিক বিয়ে করলেন শ্রী। না, আর অপেক্ষা নয়। নিজের সংসার নিজের মতো করে গড়ে তুলবেন তিনি। জন্ম নিল জাহ্নবী। অন্তরালে চলে গেলেন শ্রী। ঘুমাতে যত রাত হোক, সাড়ে ছ’টায় উঠে দুই মেয়েকে তৈরি করে, ব্রেকফাস্ট খাইয়ে, স্কুলে দিয়ে আসতেন শ্রী। নায়িকা শ্রীদেবী নন, তখন তিনি শুধুই এক মা। বারবার বনিকে জিজ্ঞাসা করেন, মোনা ও বনির সন্তান অর্জুন ও অংশুলার কথা। হোক না সৎ, তবু তো তাঁরাও তাঁর সন্তান। ইতিমধ্যেই মোনা মারা গেলেন। বনি শেষকৃত‍্যে দেরিতে পৌঁছালে সবাই আবার শ্রীদেবী কেই দোষারোপ করলেন। তিনি নাকি যেতে বারণ করেছিলেন।

দুবাইয়ে পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ এল। দারুণ আঁকতেন শ্রীদেবী। সোনম কাপুরের একটি ছবি এঁকেছিলেন। ভেবেছিলেন, দুবাইয়ে এক্সিবিশন করবেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বনি ও খুশি ভারতে ফিরে এলেও শ্রী রয়ে গেলেন দুবাই। জাহ্নবী বিয়েতে যেতে পারেননি তাঁর প্রথম ফিল্ম ‘ধড়ক’-এর শুটিংয়ের জন্য। 24 শে ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের জুমেইরা এমিরেটস টাওয়ার হোটেলের একটি ঘরে শুরু হল রীতিমতো পুলিশের আনাগোনা। ভারতে এল এক দুঃসংবাদ, শ্রীদেবী নেই। জুমেইরা এমিরেটস-এর বাথটবে লো ব্লাড প্রেসারের রোগী শ্রীদেবী অজ্ঞান হয়ে তলিয়ে গিয়েছিলেন।

শ্রীদেবীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা গিয়েছে, এর আগেও বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন শ্রী। কিন্তু এবার সব শেষ হয়ে গেল। মুকেশ আম্বানির সহযোগিতায় শ্রীদেবীর মৃতদেহ ভারতে ফিরল। জাহ্নবী ও খুশি শেষবার মাকে সাজিয়ে দিলেন জন্মদিনে মাকে উপহার দেওয়া লাল শাড়িতে। জাহ্নবীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন অর্জুন ও অংশুলা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত‍্য সম্পন্ন হতে চলেছে। মুম্বইয়ের রাজপথে তিলধারণের জায়গা নেই। পরিবার চেয়েছিলেন। মৃত্যুর মধ্য দিয়েও গোটা পরিবারকে জুড়ে দিয়ে গেলেন শ্রীদেবী। ‘শ্রী’ চলে গেলেন না ফেরার দেশে।