Home অফবিট জন্মাষ্টমীতে সিজারের হি’ড়ি’ক হাসপাতালগুলিতে, কো’লে চাই গোপাল

সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

জন্মাষ্টমীতে সিজারের হি’ড়ি’ক হাসপাতালগুলিতে, কো’লে চাই গোপাল

শুক্রবার শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে গোটা ভারতবাসী শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন পালন করেছেন। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন মনস্কামনা পূর্ণ করার আর্তি জানিয়েছে ভগবান কৃষ্ণকে। কিন্তু এই প্রথম বার জন্মাষ্টমীতে সন্তানলাভের জন্য সিজারিয়ান ডেলিভারির এই হিড়িক দেখা গিয়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে।

জানা যাচ্ছে, এই বছর শুধু অবাঙালি পরিবারই নয় বাঙালি পরিবার গুলিতেও ‘ গোপালের জন্মতিথি তে গোপাল আনার ইচ্ছে ‘ প্রকাশ করছে বেশ কিছু পরিবারের লোক। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপতাল সূত্রে খবর পাওয়া গেছে যে, যাদের ডেলিভারী ডেট শুক্রবারের কাছাকাছি ছিল তারাও এই দিন ডেলিভারী দিতে চাইছিল।

ফলে এই দিনের জন্য আগেভাগেই ‘হাউসফুল’ হয়ে গিয়েছিল কলকাতার নামিদামি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার। লেবার ওটি-র সামনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে প্রবল ব্যস্ততা প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের। সকলের আব্দার সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন চিকিৎসকরা।

আরো পড়ুন: ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প’রি’ষে’বা ক’র নিতে পারবে রেস্তোরাঁগুলি: দিল্লি হাইকোর্ট

চিকিৎসকদের মতে, এইদিন বরাবরই একটু বেশি চাপ থাকে তবে বাঙালি পরিবার গুলোয় এরকম হিড়িক আগে দেখা যায়নি।
অনেকে সমালোচনা করেও জানায় যে, শিক্ষিত ও অভিজাত পরিবারের মানুষগুলোও কি করে গোপাল লাভের আশায় আজই অপারেশন করতে হবে বলে আবদার করে সত্যি আশ্চর্যের বিষয়।

যেখানে প্রায়ই আমরা দেখতে পাই যে বাড়িতে লক্ষ্মী আসার আনন্দে পরিবারের সকলকে ভাসতে সেখানে এরকম পুত্র সন্তান লাভের আকাঙ্খা অবাক করেছে চিকিৎসকদের। স্বাভাবিক ভাবেই অনেকেই বলছেন যে, আমাদের দেশের অগ্রগতি নামেই হয়েছে, কুসস্কারাচ্ছন্ন মন এখনও বর্তমানই আছে।

লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজোয় এমন ধারা দেখা যায় কি? প্রশ্ন এ-ও যে, জন্মাষ্টমীর পুণ্য তিথিতে যাঁরা গোপালের আশায় সিজার করিয়ে কোলে লক্ষ্মী পেলেন, তাঁদের মুখে কি একবারের জন্য কালো ছায়া দেখা দিয়েছে? জানা যাচ্ছে অন্য দিনের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি ডেলিভারী হয়েছে এই দিনে।

কলকাতার নামকরা বেসরকারী হাসপাতাল পিয়ারলেসের চিফ এগজিকিউটিভ (মেডিক্যাল সার্ভিসেস) সিঞ্চন ভট্টাচার্য জানান, দৈনিক গড় ৪-৫টা সিজার এ দিন সংখ্যায় বেড়ে ৮টি হয়েছে। আমরি গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র জানান, রোজ গড়ে ২টি সিজার হয় তাঁদের হাসপাতালগুলিতে।

শুক্রবার সেটা বেড়ে হয়েছে ৫টি। ভাগীরথী নেওটিয়া হাসপাতাল গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট রুমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রোজই ৬-৭টা করে সিজার হয়। শুক্রবার দুপুর অবধি ১০টা সিজার হয়েছে। ব্যাপারটা খুব নতুন নয়। মানুষ চায়, একটা ভালো দিনে সন্তান পৃথিবীর আলো দেখুক।’

এছাড়াও বিভিন্ন চিকিৎসক বলেন যে, তারা কোনো কারণে কলকাতা ছিলেন না যখন ফিরেছেন তখনই ওটি করতে ছুটতে হয়েছে তাদের হাসপাতালে এতটাই চাপ ছিল। অনেকে তো ডাক্তার অবধি বদলাতে প্রস্তুত ছিল। প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাসব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘গোটা ন’মাস আমাকে দেখিয়েছেন এক বাঙালি প্রসূতি। কিন্তু জন্মাষ্টমীতে আমি কলকাতার বাইরে একটা চিকিৎসক সম্মেলনে থাকব জেনে ওঁরা আমার বাবা বাসুদেব মুখোপাধ্যায়ের কাছে সিজার করাচ্ছেন।

আরো পড়ুন: বি’ষে’র বাগান, প্র’বে’শ করলে বেঁ’চে ফি’র’তে পারবেন কি না জা’না নেই কারোর!

আমি বুঝলাম, দিনক্ষণটা ওঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দরকারে চিকিৎসক বদলাতেও আপত্তি নেই। সমাজবিজ্ঞানী প্রশান্ত রায়ও বাঙালির এই ধরনের কাণ্ডে অবাক। তিনি বলেন, সংস্কার ও বিজ্ঞান তো দেখছি হাত মিলিয়ে চলছে! মনে হচ্ছে যেন, যুক্তিবাদী বাঙালি ক্রমেই বৌদ্ধিক ভাবে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছেন। নইলে কৃষ্ণের মোড়কে ছেলে চায়!’

তবে সাহিত্যিক বাণী বসু অন্য কথা বলেছেন। তিনি জানান, ‘ এটি নিছকই পাগলামি এবং সংস্কারাচ্ছন্ন মন এর জন্য দায়ী। সচেতন ভাবেই তাঁরা চান, কৃষ্ণের মতো পবিত্র হোক তাঁদের সন্তান।’ তবে মানিকতলা টোল ও নবগ্রহ মন্দিরের অধ্যক্ষ নিতাই চক্রবর্তী অবশ্য জানাচ্ছেন, এই সংস্কার আদতে মানুষের মনের ভ্রম ছাড়া কিছু নয়।

তাঁর কথায়, ‘জন্মাষ্টমীতে জন্মালেই কৃষ্ণের মতো হয় না জাতক। কৃষ্ণের বাবা মা এভাবে তারিখ বদলে তাঁকে পৃথিবীতে আনেন নি তাই এভাবে জন্ম দিলেই গোপাল আসবে বা সেটা কৃষ্ণের মত হবে এমন ভাবতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, এগুলো নিজেদের আত্মতুষ্টি ছাড়া আর কিছুই না ‘, ।