সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

শুধুমাত্র কৃষ্ণ নন, অর্জুনের রথে কুরুক্ষেত্রের যু’দ্ধে উপস্থিত ছিলেন হনুমান! জানুন কা’হি’নী

হিন্দু ধর্মে মহাভারতের গুরুত্ব যে কি সেটা যিনি জানেন তিনি মানেন। রামায়ণ ও মহাভারত পড়লে যে জ্ঞান বাড়বে তা অনেক বই পড়ে বাড়বে না। জীবনের দর্শনকে খুব ভালো করে এই গ্রন্থ গুলিতে বোঝানো হয়েছে।
আমরা সবাই জানি মহাভারতে পাণ্ডব ও কৌরবদের মধ্যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়েছিল। এবং অনেক ত্যাগের পর পাণ্ডবরা জয়ী হয়েছিল।

আর এই যুদ্ধে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণকে সারথি হিসেবে লাভ করেছিলেন তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন। কিন্তু জানেন কি, শুধু কৃষ্ণ নন, বজরংবলীও এই যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন অর্জুনের সঙ্গে, তাঁর রথে। অর্জুনের রথের পতাকা বহন করেছিলেন তিনি।

রামচন্দ্রের পরম ভক্ত হনুমান কেন অর্জুনের সঙ্গে এই যুদ্ধে তাঁর রথে উপস্থিত ছিলেন অনেকেই তা জানেন না, তা জেনে নিন এখানে। একবার অর্জুন ও হনুমানের মধ্যে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। অর্জুন নিজের তীরন্দাজি নিয়ে গর্ব করে তাঁকে বলেন, ‘আপনি নিজের বানর সেনা নিয়ে ত্রেতাযুগে সমুদ্রের উপর সেতু নির্মাণ করেছিলেন।

আমি যদি আপনার জায়গায় থাকতাম, তাহলে একা হাতে শুধু তীর ছুঁড়েই এমন সেতু তৈরি করতে পারতাম, যা দিয়ে সবাই অনায়াসে সাগর পেরোতে পারত। বুঝতে পারি না, শ্রীরাম নিজে এই ভাবে তীর দিয়ে সেতু নির্মাণ না করে আপনাকে কেন এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।’

এই কথা প্রথমে সবটা শোনেন হনুমান তারপর তিনি বলেন, ‘এই স্থান যেখানে তুমি এখন দাঁড়িয়ে আছ, সেখানে তীর দিয়ে সেতু নির্মাণ করা অসম্ভব। কারণ তীরের সেতু আমার গোটা সেনা কেন, শুধু আমার শরীরের ভারই বহন করতে পারবে না।’

তখন অর্জুন তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, যে তিনি তীর দিয়ে যে সেতু তৈরি করবেন তাতে হনুমান যদি তিন পা যেতে পারেন, তাহলে তাঁকে আগুনের মধ্যে প্রবেশ করতে হবে। আর যদি ওই সেতু হনুমানের শরীরের ভারে ভেঙে পড়ে, তাহলে অর্জুন আগুনে প্রবেশ করবেন।

এই শর্ত নিয়ে অর্জুন সেতু বন্ধন করেন তার ওই তীর দিয়ে। ওদিকে হনুমানও ভগবান শ্রী রামের নাম নিয়ে চলতে শুরু করেন। হনুমানের প্রথম পদক্ষেপেই ওই ব্রিজ কাঁপতে শুরু করে। দ্বিতীয় পা ফেললে সেতু ভাঙার মতো আওয়াজ হয়, আর তৃতীয় পা ফেললে জল রক্তের মতো লাল হয়ে যায়।

হনুমান অর্জুনকে বলেন যে এই সেতু তাঁর ভার বহন করতে পারেনি, তাই পরাজয় ঘটেছে। কিন্তু অর্জুন বলেন যে কথামতো সেতুতে তিন পা ফেলতে পেরেছেন হনুমান, তাই হনুমানকেই আগুনে প্রবেশ করতে হবে। এই যুক্তি হনুমান মেনে নেয়। সে আগুনে প্রবেশ করতে রাজি হয়।

আগুনে প্রবেশ যখন করবে এমন সময় সেখানে উপস্থিত হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি বলেন যে তিনিই সেতুটিকে ভেঙে পড়া থেকে আটকান। না হলে হনুমানের প্রথম পদক্ষেপেই ব্রিজ ভেঙে পড়ত। সেতুর নীচে কৃষ্ণ একটি কচ্ছপের রূপ সেতুটি পিঠে করে রেখেছিলেন। হনুমানের দ্বিতীয় পদক্ষেপে সেতু ভেঙে যায়।

আর তৃতীয় পদক্ষেপ হনুমান আসলে শ্রীকৃষ্ণের পিঠের উপর রেখেছিলেন। আর তাঁর রক্তেই জল লাল হয়ে যায়। এই কথা জেনে হনুমান ও অর্জুন দুজনেই অবাক হয়ে যায় তারা তাদের নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখিত হন। কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাঁরা। তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন, যেখানে যা হচ্ছে, সব তাঁর ইচ্ছেতেই হচ্ছে।

এরপর তিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে হনুমানের সাহায্য প্রার্থনা করেন। তিনি হনুমানকে বলেন অর্জুনের রথের উপর তাঁর পতাকা ধরে বসে থাকতে। এর ফলে শত্রুর তীর অর্জুনের রথের মাথায় লাগলেও হনুমান সেখানে থাকায় তা ভেঙে পড়বে না এবং অর্জুনকে এগিয়ে যাওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পুরাণে যে অষ্ট চিরঞ্জীবীর কথা জানা যায়, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হনুমান। অর্থাত্‍ অমরত্ব লাভ করেছেন এমন আটজনের কথা পুরাণে পাওয়া যায়। এই আটজনের একজন হলেন হনুমান।

রামের আশীর্বাদে তিনি অমরত্ব লাভ করেন। তাই ত্রেতা যুগে রামায়ণের আমলের হনুমানকে দ্বাপর যুগে মহাভারতের আমলেও আমরা পাই। আর এভাবেই হনুমান মহাভারতের পুরো যুদ্ধেরই সাক্ষী ছিলেন।