বলিউডের সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের কন্ঠে যেন স্বয়ং দেবী সরস্বতীর বাস। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি লতাজির অকাল প্রয়াণে শোকাহত গোটা ভারত। মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে সংগীত জগতে তাঁর যাত্রা শুরু। ৯২ বছর বয়সে পৌঁছেও তিনি অত্যন্ত সুরেলা কন্ঠী ছিলেন। অনবদ্য কন্ঠস্বরের জন্য পেয়েছেন ‘ভারতের নাইটিঙ্গেল’ উপাধিও। তবে গায়িকাই শুধু তার একমাত্র পরিচয় নয়। লতা মঙ্গেশকরের কেরিয়ার শুরু হয়েছিল একজন গায়িকা নয়, বরং এক নায়িকা হিসেবেই। গায়িকা হওয়ার অনেক আগেই বাবার হাত ধরে অভিনয় জগতে এসেছিলেন লতা।
লতার বাবা দিননাথ মঙ্গেশকর নাট্যজগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই খুব ছোট বয়সে বাবার ‘ভাব বন্ধন’ নাটকে ‘লতিকা’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এই নাট্যমঞ্চ থেকেই সকলের প্রিয় ‘লতা’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে একটি মারাঠি নাটক ‘সংগীত নাটক’ এ অভিনয় করেন তিনি। জানেন কি! ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য রাজ কাপুর প্রথমে লতাকে ডেকেছিলেন। তবে সেই প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
আরো পড়ুন: অ-আ পড়তেই পা’র’ছে না! স্কুল ব’ন্ধ থাকায় বর্ণ চিনতে ক’ষ্ট হচ্ছে অধিকাংশ পড়ুয়াদের
অভিনয়ের প্রতি তেমন কোনও আগ্রহ না থাকলেও ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে সংসারের দায়িত্ব নিতে তখন একপ্রকার বাধ্য হয়েই বেশ কিছু মারাঠি এবং হিন্দি ছবিতে কাজ করেছিলেন। ১৯৪২ সালে মারাঠি ছবি ‘পাহিলি মাঙ্গলা গৌর’ -এ নায়িকার ছোট বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর ১৯৪৩ সালে ‘মাঝে বল’, ‘চিমকুলা সংসার’, ১৯৪৪ সালে ‘গজভাউ’, ১৯৪৫ সালে ‘বাদি মা’, ১৯৪৬ সালে ‘জীবনযাত্রা’, ১৯৪৮ সালে ‘মান’, ১৯৫২ সালে ‘ছত্রপতি শিবাজী’ সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন লতা।
তবে অভিনয় জীবন ছেড়ে গানের জগতেই মনোনিবেশ করেন এই সঙ্গীত সাধক। গান গেয়ে প্রথম ২৫ টাকা উপার্জন করেন। তারপর বলিউডে তাঁর জয়যাত্রা শুরু হয়। তিনি তার জীবনে ৩৬ টি আঞ্চলিক ভাষাতে এক হাজারেরও বেশি হিন্দি ছবিতে গান গেয়ে রেকর্ড করে ফেলেন। আঞ্চলিক এবং বিদেশী ভাষা মিলিয়ে এমন রেকর্ড একমাত্র তিনিই করতে পেরেছেন।
আরো পড়ুন: সকালে ঘুম থেকে উ’ঠে এই জিনিসটি একটু ছুঁ’য়ে দেখুন দূর হয়ে যাবে আ’র্থি’ক সংকট
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। এ জীবনেও তাঁর মাসিক উপার্জন ছিল ৪০ লক্ষ টাকা। আজীবন গান গেয়ে এসেছেন, আর এর মাধ্যমেই বার্ষিক ৬ কোটি টাকা উপার্জন ছিল তাঁর। অতি সাধারণ এক পরিবারের মেয়ে, যিনি অভিনয় জগতের হাতছানি উপেক্ষা করে সঙ্গীত জগতে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন, তিনি আর কেউ নন, সুরের সরস্বতী লতা মঙ্গেশকর।