হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে ছটপুজো পালন করা হয়। এই পুজোয় সূর্য দেবের আরাধনা করা হয়। এই পুজো উপলক্ষে বাড়ির বউরা মেয়েরা নির্জলা উপোষ করেন। এই বছর ১০ ই নভেম্বর হয়েছে ছট পুজো। এই ছট পুজোর অনুষ্ঠান বেশ জাঁকজমক সহকারে হয়। ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে এই পুজো দেখা যায়। ছট প্রসঙ্গেই আসা যাক জগদ্ধাত্রী পুজোর কথায়। দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী একই মাতা। মা জগদ্ধাত্রীও মা দুর্গার মতো সিংহবাহিনী। চতুর্ভুজা এই দেবীর চার হাতে থাকে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ। এখন এই পুজো বাংলায় সর্বত্র হলেও আগে কিছু নির্দিষ্ট জায়গাতেই এই পুজো হতো।
পুরাণ অনুযায়ী, সত্বগুণধারিনী সমর্থ হবেন জগদ্ধাত্রী পুজোয়, অর্থাৎ কেবল ব্রাহ্মণরা করতে পারবেন এই পুজো। দুর্গা পুজো করতে পারবেন রজোগুণধারিনী অর্থাৎ ক্ষত্রিয়রা। যারা তমোগুণধারিনী তারা করবেন কালীপুজো। অবশেষে বণিক সম্প্রদায় পরে দুর্গাপুজোর বিকল্প রূপে জগদ্ধাত্রী পুজোর ভার নেয়।
এই পুজোর প্রচলন করেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। রাজা আনুমানিক প্রায় আড়াইশো বছর আগে তার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীতে এই পুজো শুরু করেছিলেন। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে ইন্দ্রনারায়ণ মুগ্ধ হন, আর তারপর তিনি চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জ চাউলপট্টির নিচুপাটিতে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেন।
এই বছর জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হচ্ছে ১২ ই নভেম্বর শুক্রবার। জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে চন্দননগরের রূপই যেন পাল্টে যায়। দুর্গাপুজোর থেকেও এই পুজোতে বেশি আনন্দ করেন তারা। চারিদিকে প্যান্ডেল, লাইটিং, বড় বড় প্রতিমা, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়, খাবার-স্টল সবমিলিয়ে মেতে ওঠেন চন্দননগরবাসীরা। চন্দননগর তখন যেন দ্বিতীয় কলকাতা হয়ে ওঠে।
এই পুজো প্রসঙ্গে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কথা উঠে আসলেও এই দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে। সেই সময়ে নির্মিত মা জগদ্ধাত্রীর একটি প্রস্তর মূর্তি পাওয়া গেছে পূর্ব বঙ্গের বরিশালে। ওই মূর্তিটি এখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ সংগ্রহলায়ে রাখা রয়েছে।