কোভিডে শিশুদের সেরকম কোনো ক্ষতি হয়নি কিন্তু এইবার শিশুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। অ্যাডিনো ভাইরাসের আক্রমণে নাজেহাল শিশুরা। অ্যাডিনো ভাইরাসে কাবু সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ। দু’বছর থেকে দশ বছরের শিশুদের মধ্যেই এই ভাইরাসের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সংক্রমণ এতটাই বেড়েছে যে সরকারি থেকে বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালেই শিশু রোগী ভর্তির জায়গা পাওয়াই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী জানিয়েছেন “করোনা ভাইরাসে যা হয়নি, তাই ঘটছে অ্যাডিনো ভাইরাসে।”
চিকিৎসকদের মতে অ্যাডিনোর (Adenovirus) সংক্রমণের দাপট অন্তত মার্চ পর্যন্ত চলবে। তাই শিশু ও তার পরিবারের লোকদের আরও সর্তক থাকতে হবে। রাজ্যজুড়ে সিংহভাগ বাচ্চার মধ্যে জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী এই অ্যাডিনো ভাইরাসকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা।
অ্যাডিনোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।কয়েকটি ওষুধের কম্বিনেশন ব্যাবহার করা হয় ভাইরাসে ক্ষমতা কমাতে।এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে অসুস্থ শিশুদের স্কুলে পাঠানো যাবেনা। স্কুলে দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে।মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে একটি নতুন গাইডলাইন জারি করা হয়েছে।শিশুদের চিকিত্সা পেতে যাতে কোনরকম সমস্যা না হয়, সেই কারণেই এই উদ্যোগ। নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে যে –
আরো খবর: ২৪-এ বিজেপিকে হা’রা’তে সব কিছু ত্যা’গ করতে রা’জি কংগ্রেস, দলীয় সংবিধান বদল
১.মেডিক্যাল কলেজ থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত প্রতিটি হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক অ্যাকিউট রেসপেরিটরি ক্লিনিক (ARI) সবসময় চালু রাখতে হবে।
২. পেডিয়াট্রিক অ্যাকিউট রেসপেরিটরি ক্লিনিকে রাখতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক।
৩. মেডিক্যাল সুপারিনট্যান্ড্যান্ট- এর অনুমতি ছাড়া কোনও অসুস্থ শিশুকে অন্যত্র রেফার করা যাবে না।
৪. ভেন্টিলেশন-সহ আইসিইউ, সিসিইউ সর্বদা তৈরি রাখতে হবে।
৫. চিকিত্সা পেতে রুগীদের যাতে কোনও সমস্যা পড়তে না হয়, সেই জন্য সংশ্লিষ্ট পিজিটি চিকিত্সক এবং সিনিয়র রেসিডেন্ট দায়িত্বে থাকবেন।
৫. চিকিত্সার সুবিধার্থে নতুন হেল্পলাইন নম্বর 1800-313444-222 চালু করা হয়েছে।
৬. আশা ও অঙ্কনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।
৭. বিসি রায় শিশু হাসপাতাল, কলকতা মেডিক্যাল কলেজ, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ-সহ মোট পাঁচটি হাসপাতালকে পেডিয়াট্রিক হাব রূপে কাজে লাগাতে হবে।
৮. রাজ্যের প্রতিটি স্তরের হাসপাতালকে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন রাখতে পর্যাপ্ত স্যানিটাইজেশনের করতে হবে।
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, ‘‘শিশুদের মত বড়রাও কিন্তু সমান ভাবে এই ভাইরাসের কবলে পড়ছেন। গলাব্যথা, ঢোক গিলতে অসুবিধা, দীর্ঘ দিন ধরে কাশি— এই সবই কিন্তু অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। তবে বড়দের খুব একটা ক্ষতি করতে পারছে না এই ভাইরাস। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীর খারাপের পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।
বড়দের ক্ষেত্রে সেরকম কোনো ঝুঁকি নেই। তাঁদের মাইল্ড ইনফেকশন হচ্ছে।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা একসাথে জোড়া ভাইরাসের আক্রমণের শিকার হচ্ছে। যেমন- অ্যাডিনো ভাইরাসের সঙ্গে রাইনো ভাইরাস বা মেটা নিমো ভাইরাস বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।
অনেক ক্ষেত্রে একটি ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সেরে উঠতে না উঠতে আরেকটি ভাইরাস আক্রমণ করছে। তাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস সহ ভাইরাস ককটেল , হাসপাতালগুলিতে উপচে পড়ছে শিশু রোগীদের ভিড়।