সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

বিদেশে মো’টা টাকা মাইনের চাকরি, টা’র্গে’ট পূরণ না হলেই ইলেক্ট্রিক শ’ক!

আজকাল উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলে মেয়েরা একটা করা মাইনের ভালো জব পেলেই নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে রওনা দেয়। সেখানে একাই থেকে কাজ করে। এতে মোটা মেনে হয়তো মাসের শেষে মেলে তবে নিজের প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে তাদের টাচ খুব কমই থাকে। বিদেশ বিভুইয়ে কোনো বিপদ আপদ হলে ঘরের লোকের চিন্তার শেষ থাকে না।

আর ঠিক তেমনি দুর্গতির স্বীকার হলো ভারতীয় কিছু যুবক। তাদের মোটা টাকার লোভনীয় চাকরির লোভ দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে গিয়ে রীতিমত আটকে রাখা হয়। আর কত শত বেআইনি কাজ তাদের দিয়ে করানো হতো। তাঁরা করতে রাজি না হলে বা যতোটা টার্গেট দেওয়া হবে ততটা পূরণ না করতে পারলে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতো বলেও জানাচ্ছে তারা।

এই যুবকদের গল্প যে কাউকে শিহরিত করবে। জানা গিয়েছে, বিদেশে আইটি-তে মোটা মাইনের চাকরির টোপ দিয়ে নিয়ে গিয়ে সাইবার ক্রাইমের কাজ করানো হত হতভাগ্য ভারতীয় যুবকদের। পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে রীতিমতো দাস বানিয়ে রাখা হয়েছিল। যাদের শেষ অবধি মায়ানমার, ব্যাংকক থেকে বিদেশ মন্ত্রালয়ের হস্তক্ষেপে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ৮০০ জন যুবককে আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। যাঁর মধ্যে ৪৫ জন ভারতীয় যুবক ছিল।

আরো পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে “কালো” মানুষ হওয়াই মূল ল’ক্ষ্য, আ’জ’ব কী’র্তি স্থা’প’ন করলেন জাপানের Youtuber

সেই যুবকদের মধ্যেই তামিলনাড়ুর ২৯ বছরের টেকি সি স্টিফেন ওয়েসলি নামের ছেলেটিকে মায়ানমার থেকে উদ্ধার করা হয়। সে জানায়, বেঙ্গালুরুতে গ্রাফিক্স ডিজাইনারের কাজ করতেন তিনি। অতিমারির সময়ে মোটা টাকার অফার পেয়ে বেঙ্গালুরুর চাকরি ছেড়ে ফ্রিলান্স কনসালটান্ট হিসেবে কম্বোডিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চাকরিটি একটি নিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন এই যুবক। তারপরই ওই সংস্থার তরফে দুবাইতে এক ইন্টারভিউয়ের জন্য পাঠায়।

যেখানে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং মুখোমুখি ইন্টারভিউ নেন ছয়জন ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা। সেখানে পাস করার পর তাঁকে জানানো হয় থাইল্যান্ডের এক কোম্পানিতে তাঁকে নিযুক্ত করা হয়। তাঁর সঙ্গে আরও সাত যুবক সেখানে ছিল। তাঁরা ১৫ দিন দুবাইতে কাটানোর পর তাদের ব্যাঙ্কক নিয়ে যাওয়া হয়।

যদিও থাইল্যান্ডে কাজ করার জন্য তাদের কাছে কোনও ওয়ার্ক ভিসা ছিল না। তবে এয়ারপোর্টে নামার পর স্থানীয় কিছু লোক তাদের নিতে আসে এবং সেখানে তাদের অ্যারাইভ্যাল ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর থেকেই তাদের খারাপ থাকার দিন শুরু হয়। কয়েকজন জন লোক তাদের জোর করে নদী পার করে আরও গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়, কেড়ে নেওয়া হয় তাদের পাসপোর্ট। এরপর রীতিমতো বন্দি করে রেখে জোর করে বেআইনি কাজ করানো হত।

ডেটিং অ্যাপসে মডেলদের ফেক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বড়লোক ব্যবসায়ীদের স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করাতে রাজি করাতে হত। এছাড়াও থাকত আরও বেআইনি কাজের দাবি। কেউ বড় অ্যামাউন্টের টাকা বিনিয়োগ করলেই সেই টাকা চুরি করে ব্লক করে দেওয়া হত সেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট। প্রত্যেক কর্মচারীদের নির্দিষ্ট টার্গেট ছিল। সেই লক্ষ্য পূরণ না করলেই জুটত ইলেকট্রিক ব্যাটনের শক। কেউ কাজ না করতে চাইলেও কপালে জুটত এমনই বিদ্যুতের ঝটকা এই সব কিছুই ওই যুবকেরা জানান।

স্টিফেন বলেন, ”যে মুহূর্তে মায়ানমারের সেনা আধিকারিকরা ওই অফিসের দরজা ভেঙে ঢুকলেন, যেখানে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছিল, আমি তখনই প্রথমবার মুক্তি স্বাদ কী বুঝেছিলাম।” তাদের কতটা কষ্ট পেতে হয়েছে তা তাদের কথা শুনলেই বোঝা যায়। দীর্ঘদিন বাড়ির লোক তাদের ছেলে দের খোঁজ না পেয়ে দায়ের হয়েছিল থানায় একের পর এক রিপোর্ট।

সেখান থেকেই পর্দাফাঁস এই চক্রের। চলতি বছরের ১৫ অগাস্ট ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের হস্তক্ষেপে সেখানকার সেনা উদ্ধার করে এই বন্দি কর্মচারীদের। তবে এই সংস্থার লোকেদের ধরা হয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু বিদেশের একটা কাজের ফাঁদ যে কি ভয়ঙ্কর হতে পারে তা এটা শুনে শিক্ষা নেওয়ার মতোই একটা ঘটনা।