রূপান্তরকারীদের নাম শুনলেই আমাদের ভদ্র সমাজ এখনো মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিজেদের জীবনের সঙ্গে এবং পরিবারের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয় তাদের। কিন্তু এমন কিছু রূপান্তরকারী রয়েছে আমাদের মধ্যে যারা নিজেদের জীবনের সঙ্গে লড়াই করে আজ সফলতার শিরোনামে পৌঁছে গেছেন। তেমনি একজন রূপান্তরকারী নাম হল নাজ যোশী। তিনি হলেন দেশের প্রথম রূপান্তরকারী সুন্দরী। পরপর সাতবার দেশে এবং বিদেশে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জয় যুক্ত হয়েছেন তিনি।
কিন্তু এই নিষ্ঠুর সমাজ তাকে মেনে নেয় নি। তাই এখনও অর্থ উপার্জনের জন্য তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মানুষের দরজায়। জীবনযাত্রা যে কখনোই সহজ ছিল না তা বলাই বাহুল্য। মেয়েলি স্বভাবের জন্য পাড়া-প্রতিবেশী এবং আত্মীয় স্বজনের কাছে লজ্জায় পড়তে হতো তাকে।
এইভাবে চলতে চলতে একদিন বাড়ির সকলে তাকে মুম্বাইয়ের এক আত্মীয়র বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কখনোই পরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন নি এই রূপান্তরকামি। বারে নেচে পয়সা উপার্জন করতেন তিনি। এই ভাবেই অর্থ উপার্জন করে আইএমটি থেকে বিয়ে পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্য নয়, লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপ্রচারের খরচ নিজেই জোগাড় করেছেন তিনি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি নিয়ে পোশাক ডিজাইনিং এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি।
এরপর মডেলিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে মডেলিং এজেন্সি তে কাজ করা শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং নিজের সেরাটা দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।
সম্প্রতি তিনি এম্প্রেস আর্থের খেতাব জয় করেছেন। তার সাথে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন মেস্কিকো, ব্রাজিল কলম্বিয়া এবং স্পেনের সুন্দরীরা। এখানে তাকে শেষ পর্বে প্রশ্ন করা হয়েছিল, লকডাউন একই অতিমারির একমাত্র সমাধান? উত্তরে নাজ বলেন,লকডাউন হয়ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমাতে পারে কিন্তু এই মহামারী কি সম্পূর্ণ নির্মূল করবে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা। বর্তমানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু সবটাই অনিয়মিত।
এখনো বাকি রূপান্তরকামীদের মত নিয়মিত সকালে রাস্তায় নেমে হাত পাততে হয় তাকে। যারা এই পরিস্থিতির শিকার, তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন তিনি। বরাবরই নিজের খরচ নিজে চালানোর পক্ষপাতী নাজ কাউকে ছোট বলে মনে করেন না। এই রূপান্তরকামীরা মুসলিম এবং বাবা হিন্দু পাঞ্জাবি। বাবা-মায়ের সঙ্গে এখনো সম্পর্ক নেই তার। নাজের দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে।একটি সন্তানকে আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে লাভ করেছেন তিনি, অন্যজনকে দত্তক নিয়েছেন।