৩০ বছর আগে ভারতীয় টেলিভিশন সিরিয়ালে শুরু হয়েছিল মহাভারত। সব চরিত্রের কাস্টিং হয়ে গেলেও ‘ভীম’ চরিত্রটিকে খুঁজে পেতে পরিচালককে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। অনেক অনুসন্ধানের পর পাওয়া গিয়েছিল প্রবীণ কুমার সোবতীকে যিনি ছিলেন ৬ ফুটেরও বেশি লম্বা এবং শক্তিশালী দেহের অধিকারী। ভীম চরিত্র টির জন্য একেবারে পারফেক্ট। এই চরিত্রে তাঁর অভিনয় মানুষ আজও ভুলতে পারে না। এছাড়া প্রবীণ অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দেশের জন্য অনেক পদকও জিতেছেন, কিন্তু আজ ৭৬ বছর বয়সে তিনি অজস্র সমস্যার সাথে লড়াই করছেন। নিজের পরিস্থিতির বর্ণনা করে তিনি পেনশনের জন্য সরকারের কাছে আবেদনও করেছেন।
প্রবীণ কুমার সোবতী শুধু যে অভিনয় করতেন তাই নয় তিনি একজন নামকরা ক্রীড়াবিদও ছিলেন। তিনিই একমাত্র ভারতীয় ক্রীড়াবিদ, যিনি কমনওয়েলথের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। আর সেই মানুষটিই এখন জীবনযাপনের জন্য পেনশন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স ৭৬ বছর। আমি অনেক দিন ধরে বাড়িতে বসে আছি। আর ভালো লাগছে না। খাওয়ার মধ্যেও অনেক বাধানিষেধ আছে। মেরুদণ্ডের সমস্যা রয়েছে। স্ত্রী বীণা ঘর দেখাশোনা করেন। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে মুম্বাইয়ে। তখন সবাই ভীমকে চিনত, কিন্তু এখন সবাই ভুলে গেছে।”
সম্প্রতি গণমাধ্যমের সামনে নিজের সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে প্রবীণ কুমার সোবতী বলেন, করোনার সময়ে সম্পর্কের বাস্তবতা সবার সামনে এসেছে। উনি অভিযোগ করে বলেন, পাঞ্জাবে আসা সমস্ত সরকারই পেনশন থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেছে। তিনি জানান, এশিয়ান গেমস বা পদক জয়ী সব খেলোয়াড়কে পেনশন দেওয়া হলেও তিনি এখনও পর্যন্ত পেনশন পাননি, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় তিনিই সবচেয়ে বেশি সোনা জিতেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে তিনি বিএসএফ থেকে পেনশন পাচ্ছেন, কিন্তু তার খরচ অনুযায়ী তা যথেষ্ট নয়।
প্রবীণ কুমার এও জানিয়েছেন, তিনি বিএসএফ-এ ডেপুটি কমান্ড্যান্টের চাকরিও পেয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে একদিন তিনি একজনের কাছ থেকে একটি খবর পান যে বিআর চোপড়া মহাভারত তৈরি করছেন এবং তিনি ভীমের চরিত্রে তার মতো কাউকে কাস্ট করতে চান। যখন তিনি বিআর চোপড়ার সঙ্গে দেখা করতে যান, তখন বিআর চোপড়া তাকে দেখে বলেছিলেন যে এবার ভীমকে পাওয়া গিয়েছে। এরপর অর্ধশতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন প্রবীণবাবু।
প্রবীণ কুমারের ফিটনেস দেখে তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করেন। এরপর তিনি প্রতিযোগিতা জিততেও শুরু করেন। ৯৬৬ সালের কমনওয়েলথ গেমসের ডিসকাস থ্রোতে নাম ওঠে তাঁর। এই খেলা ছিল জ্যামাইকার কিংস্টনে। এতে তিনি রৌপ্য পদক জিতে নেন। এরপর তিনি ১৯৬৬ ও ১৯৭০ সালের ব্যাংককে এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক জিতে দেশের নাম উজ্জ্বল করেন। তিনি ৫৬.৬৭ মিটার দূরত্বে ডিসকাস নিক্ষেপ করে এশিয়ান গেমসের রেকর্ডের অধিকারী হন। পরবর্তী এশিয়ান গেমস ১৯৭৪ সালে ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি রৌপ্য পদক পান। কিন্তু আর এগোতে পারেননি, এরপর থেকেই তাঁর পিঠের ব্যথা শুরু হয়।