সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

একটানা ১৮ বছর আ’ট’কে ছিলেন বিমানবন্দরে, নাসেরির কা’হি’নী নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমা

২০০৮ সালের হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা দ্য টার্মিনাল যাঁরা দেখেছেন তাঁরা হয়তো সেই সিনেমা শুধুই উপভোগ করেছেন। কিন্তু এই সিনেমার পিছনে একটি বাস্তব গল্প লুকিয়ে আছে একটি নিসঙ্গ মানুষের। আর তাঁর সেই জীবনের অর্ধেক প্লট নিয়েই তৈরি করা হয়েছিল এক সিনেমা। যা সেই সময় খুব পপুলারও হয় । কিন্তু কে এই ব্যাক্তি আর কি বা ছিল তাঁর জীবনের ঘটনা যা সিনেমাকেও হার মানায়। ওই নিঃসঙ্গ ব্যাক্তিটির নাম মেহরান করিমি নাসেরি। তাঁর জন্ম হয়েছিলো ইরানের মসজিদ সোলেমানে। তাঁর তাঁর বাবা ছিলেন একজন ডাক্তার। ও তাঁর মা ছিলেন স্কটিশ নার্স।

ইরানে যথেষ্ট সচ্ছ্বল পরিবারে জীবন অতিবাহিত করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগোস্লাভ অধ্যয়নের জন্য ব্রিটেনে আসেন। তবে ইরানে শাহ শাসনের প্রতিবাদ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে ফিরে আসার পর তাকে ইরান থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে পরবর্তীকালে দেখা যায়, তাঁকে আদৌও ইরান থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। পরবর্তীকালে বহু দেশে আবেদন করা হলেও কোনও দেশেই তাঁকে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি সংবামাধ্যম সূত্রে এমনই খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তবে বেলজিয়ামে পরে থাকার অনুমতি পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি থাকেন নি। কারণ তিনি ব্রিটেনেই থাকতে চেয়েছিলেন। তাঁর ব্রিটেনেই থাকতে চাওয়ার কারণ হলো তাঁর মা ছিলেন ব্রিটিশ মহিলা। তাই নাসেরি ব্রিটেনে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটেনে থাকার অনুমতি সে পায়না। আর সেই সময়েই নাসেরি দাবি করেছিলেন, তার নথি-সহ গোটা ব্রফিকেস চুরি হয়ে যায়। তবে তাঁর দাবিগুলি ধীরে ধীরে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। নথি ছাড়াই লন্ডনের বিমানে ওঠেন।

আরো পড়ুন: টুইন টাওয়ারের জমিতে এবার হ’বে মন্দির! পুনরায় বিল্ডিং হলেই যাওয়া হ’বে সুপ্রিম কোর্টে

সেখানেও তাঁকে ফ্রান্সে ফিরে যেতে বলা হয়। কিন্তু প্যারিসের শার্ল দে গল বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য বৈধভাবে বিমানবন্দরে প্রবেশ করায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই এত সব ঘটনা তাঁর মনে প্রভাব ফেলে। কারণ তিনি যা চেয়েছেন যেখানে থাকে চেয়েছেন কতটাই তাঁকে দেওয়া হয়নি। ইরানের বাসিন্দা হলেও তিনি ব্রিটিশ হতে চেয়েছিলেন। নাম পাল্টে হয়ে চেয়েছিলেন স্যার অ্যালফ্রেড। কিন্তু কোনও ইচ্ছেই তাঁর পূরণ হয়নি।

সে তাই ওই বিমানবন্দরেই থেকে যায়। আর বিমানকর্মীদের দেওয়া খাবার ও জামাকাপড় পরেই তিনি তাঁর জীবনের এক একটি দিন কাটিয়ে দিচ্ছিলেন। জানা যায় দীর্ঘ ১৮ বছর ওই বিমান বন্দরেই থেকে জন্য তিনি। আর তাঁর কিন্তু তাঁর এই জীবনের গল্প কাণ্ড আসে বিখ্যাত পরিচালক স্পিলবার্গের। তিনি একটি সিনেমা তৈরি করেছেন নাসেরির জীবনের কাহিনী নিয়ে।

আর তাই ২০০৩ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গের ড্রিমওয়াকর্স প্রযোজনা সংস্থাটি নাসেরির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ও সিনেমার জন্য কাহিনি বা প্লটের স্বত্বের জন্য প্রায় ২৫০ হাজার ডলার দেওয়া হয় তাঁকে। তবে পুরোটা নয় অর্ধেকটা জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি করেন সেই সিনেমা। অবশেষে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে হটাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

তাঁর সেই অন্তিম ঠিকানা প্যারিসের শার্ল দে গল বিমানবন্দরে। সেখান থেকে তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করা হলে ফ্রান্সের রেড ক্রস তার দায়িত্ব নেয়। তবে বেশিদিন লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৮ বছর জীবনে সর্বাধিক কষ্ট পাওয়ার পর জুলাই মাসেই মৃত্যু হয় তাঁর।