সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

দেবীপক্ষে কেন কুমারী পুজোর আয়োজন ক’রা হয়? কেন এই পুজোর এ’তো গু’রু’ত্ব?

সামনেই বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গোৎসব। আর কটা দিনের অপেক্ষা মাত্র। নানা নিয়ম কানুনের মধ্য দিয়ে মা দুর্গার আরধনা করে পালিত হবে দুর্গাপূজার পাঁচটি দিন। কিন্তু আমরা অনেকেই কোন নিয়মের কি মাহাত্ম্য তা জানি না। যেমন- আমরা দেখি প্রতি বছর মহা অষ্টমীর দিন কুমারী পূজা হতে। কিন্তু কেনো হয় এই কুমারী পূজা অনেকেই জানেন না। আসুন জেনে নেওয়া যাক কেনো কুমারী মেয়েকেই পূজো করা হয়, এবং কি কারণে তাঁদের পূজা করা হয়।

পূরণ মতে জানা যায় যে, কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। বলা হয়ে থাকে যে, এই বানাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করে নেয়। আর তাতে দেবতাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। তখন তাঁরা শরণাপন্ন হন মা কালির কাছে। সেই সকল দেবগণের কথা শুনে তাঁদের অনুরোধ রাখতে মহাকালী পুনর্জন্ম নেন। আর পুনর্জন্মে কুমারীরূপে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।

কুমারী মেয়েদেরই পূজো করা হয় কারণ তন্ত্রশাস্ত্রমতে ষোলো বছরের বয়সের থেকে ছোটো অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা করার জন্যই কুমারী পূজা করা হয়। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গে খুব কম জায়গাতেই কুমারী পূজা হতে দেখা যায়। তবে বেলুড় মঠে খুব ধুমধাম করে করা হয় কুমারী পূজা। তবে জানা যায় এখনও উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের নবরাত্রি পালনের সময় তাদের প্রায় ঘরে ঘরেই কুমারী পূজা হয়ে থাকে।

আমাদের বাংলায় সাধারণত ব্রাম্ভন কন্যারাই পূজিত হয়ে থাকে কিন্তু অন্য জায়গায় যেকোনো ধর্মের মেয়েদেরই পূজা করা হয়। আসলে এরকম কোথাও লেখা নেই যে ব্রাম্ভন মেয়ে ছাড়া পূজো করা যাবে না। তবুও অনেক জায়গা তেই এটা মানেন না। এই কুমারী পূজার একটি বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। শাস্ত্রমতে বলা হয় যে, কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো- নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনি থেকে এও পাওয়া যায় যে এই দর্শন তত্ত্বের কারণেই স্বয়ং রামকৃষ্ণ পরমহংস তাঁর স্ত্রী সারদা দেবীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা অব্দি করেন। আর সেই থেকেই বেলুড় মঠে আজও এই পূজা হয়ে আসছে। শুধু তাই নয় এই পূজার জন্য যেসমস্ত বয়সী কন্যাদের পূজা করা হয় তাদের বয়স অনুযায়ী নামে ঢাকা হয়। যেমন :-

এক বছরের কন্যা — সন্ধ্যা
দুই বছরের কন্যা — সরস্বতী
তিন বছরের কন্যা — ত্রিধামূর্তি
চার বছরের কন্যা — কালীকা
পাঁচ বছরের কন্যা — সুভগা
ছয় বছরের কন্যা — উমা
সাত বছরের কন্যা — মালিনী
আট বছরের কন্যা — কুব্জিকা
নয় বছরের কন্যা — কালসন্দর্ভা
দশ বছরের কন্যা — অপরাজিতা
এগারো বছরের কন্যা — রূদ্রাণী
বারো বছরের কন্যা — ভৈরবী
তেরো বছরের কন্যা — মহালক্ষ্মী
চৌদ্দ বছরের কন্যা — পীঠনায়িকা
পনেরো বছরের কন্যা — ক্ষেত্রজ্ঞা
ষোলো বছরের কন্যা — অন্নদা বা অম্বিকা