সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

Ford কোম্পানির গাড়ি কি’ন’তে ই’চ্ছু’ক? তবে জানুন কেন ভারত ছাড়ার সি’দ্ধা’ন্ত নিলো এই বিখ্যাত সং’স্থা

মার্কিন গাড়ি তৈরি সংস্থা ফোর্ড – এর নাম জগতজোড়া খ্যাত। এই কোম্পানি ভারতে শুরু করেছিল গাড়ি তৈরির ব্যবসা। বিগত ২৫ বছর ধরে তাদের একাধিক ব্র্যা্ন্ডের গাড়ি ভারতে বিক্রি হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এই গাড়ি তৈরীর কোম্পানি ভারত থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাইছে। শোনা যাচ্ছে, গুজরাটের সানন্দে থাকা কারখানাকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ করবে। আবার ২০২২ সালের মধ্যে চেন্নাইয়ে তাদের যে কারখানাটি আছে সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে বলেই খবর। ভারতের এই দুটি কারখানাতে গাড়ি অ্যাসেম্বল এবং ইঞ্জিন তৈরি করত ফোর্ড।

এই মার্কিন সংস্থা ভারতে বছরে ৪৪০,০০০ গাড়ি তৈরি করে। যদিও ফোর্ড বেশকিছু সম্ভাবনা এখনও খতিয়ে দেখছে। যেমন- পার্টনারশিপের মাধ্যমে ভারতে তাদের সংস্থাকে বাঁচিয়ে রাখা, প্ল্যাটফর্ম শেয়ারিং, কনট্র্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এবং কারখানাগুলো পুরোপুরি বিক্রি করে দেওয়া। তবে, সানন্দে তাদের ইঞ্জিন তৈরির কারখানা চালু রাখবে ফোর্ড। কারণ ফোর্ড তাদের রেনগার ট্রাকের ইঞ্জিন এই প্ল্যান্ট থেকেই তৈরি করে এবং তা বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তে ফোর্ডের বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হয়।

স্মল-কার সেকশনে ফোর্ড ফিগো খুবই জনপ্রিয় একটি গাড়ি। এছাড়াও সেমি স্পোর্টস-কার কাম লিটল এসইউভি-তে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ফোর্ডের ইকো-স্পোর্টস। এছাড়াও ফুল এসইউভি রেঞ্জে ফোর্ড এনডেভর একটি জনপ্রিয় নাম। তার ইনটেরিয়ার কমফোর্ট, রোবাস্ট স্ট্রাকচার এবং স্মুথ লং-ড্রাইভিং-এর জন্য বিশেষজ্ঞরা এই গাড়িটিকে আদর্শ বলেছিলেন। কিন্তু ভারতে সেভাবে মুনাফা অর্জন করতে পারেনি ফোর্ড। এই মুহূর্তে মোট গাড়ি উৎপাদনের মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবহার করছে বলে জানা গিয়েছে। তাই ভারত থেকে নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাইছেন তারা। ফোর্ড ভারত ছাড়ার মূল কারণগুলো হল –

১) মাত্র ২ শতাংশ বাজার- ভারতের বাজারে গাড়ি ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করলেও তাতে কোনোদিনই সফল হয়নি ফোর্ড। ২৫ বছরে ফোর্ড ভারতে মাত্র ২ শতাংশ বাজার ধরতে পেরেছিল। কিন্তু সেইটুকুও ধীরে ধীরে হাতের বাইরে চলে যাচ্ছিল ফোর্ডের।

২) ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি- তাদের কথায় গাড়ি বিক্রি করে ভারতের বাজার থেকে কোনও মুনাফাই লাভ করতে পারেনি তারা। বরং গত ১০ বছরে এই সংস্থা ভারতে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

৩) ফোর্ড ইন্ডিয়াকে বাঁচানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল- ফোর্ড ইন্ডিয়ার হেড অনুরাগ মেহরোত্রা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, তারা ফোর্ড ইন্ডিয়াকে রক্ষা করার সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভদায়ক হিসাবে সংস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সমস্ত প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয় তাদের।

৪) নিত্য-নতুন প্রযুক্তির খরচ- শুধু ভারত নয় ব্রাজিল থেকেও ব্যবসা তুলে নিয়েছে ফোর্ড। দীর্ঘদিন ধরেই ফোর্ডের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল। সেই ক্ষতি আরও বাড়তে লাগল ইলেক্ট্রিক কার তৈরি করার ফলে। এছাড়াও নিত্য-নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগে খরচ বাড়ছে।

৫) প্রধানমন্ত্রীর মেকিং ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন- ফোর্ডের আগে গত কয়েক বছরে ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়েছে হার্লে ডেভিডসন ও জেনারেল মোটরস। এদের সকলেরই যুক্তি ছিল যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেভাবে মেকিং ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন করেছেন তাতে ভারতীয়রা বেশি করে দেশীয় সংস্থার তৈরি করা গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। সূত্রের খবর ফোর্ড এই মেকিং ইন্ডিয়ার ক্যাম্পেনে কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছে তাই এই সিদ্ধান্ত।

৬) স্মল কারে ভারতের বাজারে সুজুকি ও হুন্ডাই-এর আধিপত্য- ভারতের বাজারে সবচেয়ে বড় হল স্মল-কার মার্কেট। আর এই বাজারের অধিকাংশটাই নিয়ন্ত্রণ করে জাপানের সুজকি তাদের মারুতি সুজুকি সংস্থার নামে এবং অন্যটি হল দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্ডাই। স্মল কার সেগমেন্টে বিক্রির তালিকায় থাকা সেরা ১০টি গাড়ির মধ্যে ৭টি গাড়ি মারুতি সুজুকি-র। আর বাকি তিনটি গাড়ি হুন্ডাই-এর।

৭) ভারতে গাড়ি শিল্পের আশানুরূপ বৃদ্ধি না হওয়া- বিভিন্ন সমীক্ষায় বারবার দাবি করা হয়েছিল যে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের গাড়ি শিল্প বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ বাজার হিসাবে স্থান করে নিতে চলেছে। আমেরিকা ও চিনের গাড়ির শিল্পের পরই ভারত হয়ে উঠবে গাড়ি কেনা-বেচায় বিশ্বের তৃতীয় স্থানাধিকারী। কারণ, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের গাড়ির বিক্রির হার ৫০ লক্ষে পৌঁছানোর কথা ছিল। অথচ ২০২০ সালের মধ্যে ভারত বার্ষিকভাবে শুধুমাত্র ৩০ লক্ষ গাড়ি বিক্রির খাতায় নাম লেখাতে পেরেছে। যা ইউরোপ এবং জাপানে বিক্রি হওয়া গাড়ির সংখ্যা থেকে অনেকটাই কম।

৮) মহিন্দ্রার সঙ্গে চুক্তি বাতিল- শেষরক্ষা হিসাবে মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কম দামি গাড়ির একটা চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল ফোর্ডের। কিন্তু সেটাও সফল হয়নি।

৯) ফোর্ডের প্রায়োরিটি লিস্টে নাম নেই ভারতের- গত বছর ফোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পরই চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জিম ফারলে পরিস্কার করে দিয়েছিলেন যে কোনওভাবেই তারা বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ভারতে ব্যবসার বৃদ্ধি নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না।

১০) ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন ব্র্যান্ডের গাড়িতে দুর্বলের তকমা- এমনিতেই ভারতের গাড়ি বাজারে একটি ধুকতে থাকা সংস্থায় পরিণত হয়েছিল ফোর্ড। এরমধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া যে তারা যে নতুন ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো বাজারে ছেড়েছিল তার কোয়ালিটি রিপোর্ট লেগেটিভ এসেছে। এমনিতেই ফোর্ডের কয়েকটি সেগমেন্টের গাড়ির উপরে ওভার-প্রাইসড-এর তকমা ছিল। কোয়ালিটি রিপোর্টের পরীক্ষায় ফোর্ডের গাড়িগুলি-র না উত্তীর্ণ তহতে পারাটা এক অন্য বিপদের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল।

এই ঘটনা অত্যন্ত প্রভাব ফেলার মতো খবর। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে কারখানা বন্ধ হওয়ার ফলে কাজ হারাবেন অন্তত ৪০০০ লোক। তবে এখন তারা ভারতের বাইরে থাকা অন্য দেশের প্ল্যান্ট থেকে গাড়ি ইমপোর্ট করবে বলে খবর। আপাতত ডিলারর্স এবং ক্রেতাদের পরিষেবা দেওয়া হবে। ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে ফোর্ডের এই সিদ্ধান্ত ভারতের গাড়ি শিল্পের পক্ষে এক বড় ধাক্কা। ফোর্ডের পিছনে ডিলার্সদের ২৭২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়ে রয়েছে। পাঁচ মাস আগেও নতুন ডিলার্স নিয়েছে ফোর্ড। তাই ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে যে যদি এমন সিদ্ধান্তই তারা নেবেন তাহলে নতুন ডিলার্স নেওয়ার কারণ কি?