কাছাকাছি এবং কম খরচের মধ্যে বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় এবং অত্যন্ত বিলাসবহুল পর্যটনকেন্দ্র হল দার্জিলিং। তাই সময় পেলেই বাঙালি মধ্যবিত্ত ভ্রমণপ্রেমীরা এই শহরে গিয়ে ছুটি কাটিয়ে আসেন। তবে জানেন কি এমন একটা সময় ছিল যখন পাহাড়ের রানি দার্জিলিং ছিল এক্কেবারে সাহেবি শহর। বলা যেতে পারে এটি সাহেবদের অত্যন্ত প্রিয় শহর ছিল।
গরমকালে কলকাতার অসহ্য গরমে সাহেবরা সপরিবারে দার্জিলিং-এ যেতেন ছুটি কাটাতে। পাহাড়ের কোলের এই ঠান্ডা শহরেই কাটিয়ে নিতেন গরমের দিনগুলি। সাহেব, বাঙালিরা বাদেও দেশ বিদেশের বহু পর্যটক এই অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং মনোরম পরিবেশের হাতছানিতে বার বার ছুটে আসে পাহাড়ের কোলে।
শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমান বন্দর থেকে দার্জিলিং-এর দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। বাস, গাড়ি কিংবা জিপে চড়ে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই দার্জিলিং পৌঁছে যাওয়া যায়। দার্জিলিং-এ গিয়ে টাইগার হিল, কার্শিয়াং, কালিম্পং, চা বাগান, ম্যাল সবকিছু একবারের লং ট্যুরেই ঘুরে দেখে নেওয়া যায়।
আরো পড়ুন: স্রোতের বিপরীতে ছু’টে চলেছে রেঞ্জ রোভার! এহেন স্টা’ন্ট দে’খে হতবাক গাড়ি প্রেমীরা
পাশাপাশি দার্জিলিং-এ রয়েছে বেশ কয়েকটি অচেনা গ্রাম। আর এই গ্রামগুলির মূল আকর্ষণ খাঁটি নেপালি খাবার। আর এই গরমের ছুটিতে দার্জিলিং ঘুরতে গিয়ে যদি বৃষ্টির দেখা পান তাহলে তো গরম এবং বর্ষার মাঝে সে এক অন্যরকমের অভিজ্ঞতা। এই সময় জলে ভরা তিস্তা নদীর রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বৃষ্টিতে ধুয়ে পাহাড়-জঙ্গলের রূপ একেবারে সবুজ এবং মোহময় হয়ে ওঠে।
আসলে দার্জিলিং পাহাড়ি শহর বলে এখানে বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হয়। তিব্বতি শব্দ ‘দোর্জি’ এবং ‘লিং’– এই দুই শব্দ যুক্ত হয়ে হিমালয়ের ছোট্টো শহরটির নাম হয়েছে দার্জিলিং। ‘দোর্জি’ শব্দের অর্থ বজ্র। অন্যদিকে দেবাদিদেব ইন্দ্রের অস্ত্রও এই বজ্র। আর তিব্বতি ভাষায় ‘লিং’ শব্দের অর্থ এলাকা বা স্থান। তাই এক্ষেত্রে দার্জিলিং-এর অর্থ বজ্রের দেশ।
দার্জিলিঙের রঙ্গিত ভ্যালি রোপওয়ে হল এশিয়ার দীর্ঘতম রোপওয়ে। এই রোপওয়ে চড়ে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যেতে গেলে মেঘের চাদর ভেদ করে যেতে হয়। রোপওয়ে চড়ার সময় হিমালয়ের যে অপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়বে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। নীচের চা বাগানগুলি দেখে মনে হবে যেন সবুজ চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন: মমতার বই বেস্ট সেলার, আপনার বইয়ের নাম কেউ বলতে পারবে না, সাহিত্যিকের উ’দ্দে’শ্যে দেবাংশু
দার্জিলিং-এর অন্যতম মূল আকর্ষণ টয় ট্রেন। এখানকার টয় ট্রেনের সঙ্গে অন্য কোনো স্থানের টয় ট্রেনের তুলনাই হয় না। আসলে দার্জিলিং-এর ট্রেনকেই বলা হয় টয়ট্রেন। দুই ফিট চওড়া গজ লাইনের উপর দিয়ে একেবারে খেলনার গাড়ির মতো দেখতে ট্রেন চলে। তবে ট্রেনের গতি খুবই কম।
ট্রেনের চেহারাটিও অপূর্ব সুন্দর। বাঁশি বাজিয়ে যখন টয় ট্রেন এগিয়ে চলে তখন মনে হয় যেন বিদেশি রূপকথার দেশে আপনি চলে গেছেন। এই ট্রেনযাত্রাকে বিশ্বের পাহাড়ি রেলপথের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলে বিবেচনা করেছে UNESCO।
সেই সাথে দার্জিলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গের যে অপূর্ব সৌন্দর্য্য চোখে পড়ে তা সত্যিই সেরার সেরা। দার্জিলিঙের টাইগারহিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছন থেকে সূর্যোদয় হয়তো বিশ্বের সেরা প্রাকৃতিক দৃশ্য। এই অপূর্ব দৃশ্য যদি উপভোগ করতে চান তাহলে অন্ধকার থাকতে ঘুম থেকে উঠে চলে যান টাইগির হিলে। সেখান থেকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য স্বর্গসুখ ছাড়া কিছুমাত্র কম নয়।
আরো পড়ুন: আপনার দৃষ্টিশক্তি কেমন তা যাচাই ক’রে নিন! কি লেখা আ’ছে পড়তে পারছেন?
ব্রিটিশ আমলের কিছুটা আস্বাদ পেতে চাইলে থাকার জন্য বেছে নিন সেখানকার বিখ্যাত উইন্ডামেরে হোটেল। হোটেলের ভিতর গেলে মনে হবে যেন ব্রিটিশ যুগে পৌঁছে গেছেন। হোটেলের ফায়ার প্লেসে আজও কাঠ কয়লার আগুন জ্বলে। বিগত ভিক্টোরিয়ান যুগের বায়ুমণ্ডল আপনাকে সময়মতো ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এই উইন্ডামেরে ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল মূলত অবিবাহিত ইংরেজদের একটি বোর্ডিং হাউজ। পরে এটি হোটেলে পরিণত হয়।
পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই ঐতিহ্যবাহী স্থানটি থেকে নেপাল, ভুটান, তিব্বত এবং সিকিমের ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। ঔপনিবেশিক শাসনের আরও নিখুঁত অনুভূতি পেতে চাইলে, ব্রিটিশদের তৈরি গির্জা এবং পুরনো বাংলোগুলি ঘুরে নিতে পারেন। কালিম্পং-এর কাছে ঔপনিবেশিক যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি বাংলো হল মরগান হাউজ এবং ক্রিকেটি।