আজকাল রোজগারের তাগিদে অনেক মানুষই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দেন। এক্ষেত্রেও কোনরকম ব্যতিক্রম হয়নি । কেউ গিয়েছিলেন হোটেলের কাজে, কেউ বা আবার পড়াতে । ভারত থেকে সুদূর ‘কাবুলিওয়ালা’র দেশে গিয়ে যেন দুর্ভোগের শেষ নেই সকলের। কেউই জানেন না কীভাবে তালিবান শাসিত আফগানিস্তান থেকে নিরাপদে ফিরে আসতে পারে তাদের নিজেদের দেশে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আফগানিস্তানে বাংলার অন্ততপক্ষে ২০০ জন আটকে পড়েছেন। নবান্নের তরফ থেকে এই পরিসংখ্যান জানিয়ে বিদেশমন্ত্রকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দ্রুত তাঁদের ফেরানোর জন্য আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের ৩ জনের কোনো খোঁজ নেই। তাঁদের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগও সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এবার উত্তর ২৪ পরগনা থেকেই অন্তত ৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তার মধ্যে বেশিরভাগ বাসিন্দা বনগাঁর গোপালনগর এলাকার। গোপালনগর থানার পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের চারজন – জয়ন্ত বিশ্বাস, বিদ্যুৎ বিশ্বাস, পলাশ সরকার, প্রবীর সরকার। এঁরা সকলেই কর্মসূত্রে গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে।
পরিবার সূত্রে খবর, হোটেলের কাজে কাবুলে গিয়েছিলেন তাঁরা। যেদিন থেকে দেশটির দখল নিয়েছে তালিবান জঙ্গিরা, সেদিন থেকেই উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে প্রিয়জনদের। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অসহায় পরিবারগুলির আবেদন, আটকে পড়া ছেলেদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হোক। এই খবর পেয়ে এদিনই সন্ধেবেলা নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়িতে যান গোপালনগর থানার পুলিশ আধিকারিক চিন্তামণি নস্কর ও পাল্লা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নিশীথ বালা। ভিডিও কলে নিশীথ বালা বলেন, “কাবুলে ভারতীয় বিমান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাঁরা আটকে আছে। মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্য প্রশাসনের কাছে গ্রামের ছেলেদের ফিরিয়ে আনার কথা বলেছি।”
নিমতার ওলাইচণ্ডীতলার বাসিন্দা তমাল ভট্টাচার্য গত মে মাসে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে। এরপর সেখানে তালিবানি শাসন চালু হতেই চিন্তায় পড়ে যান তমালের বাবা-মা। তমালের বাবা শ্যামল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ”গতকাল ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। বর্তমানে সে স্কুলের প্রিন্সিপালের বাড়িতে রয়েছে। আর ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিকদের সঙ্গে বলে দ্রুত দেশে ফেরার চেষ্টা করছে।”
একইভাবে, অশোকনগর থানার এজি কলোনি এলাকার বাসিন্দা সুজয় দেবনাথ ২০১৮ সালে পেটের টানে কাবুলে কাজে গিয়েছিল। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তিনিও আটকে পড়েছেন কাবুলে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা। সুজয়ের বাড়িতে গিয়ে অশোকনগর থানার পুলিশ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পাসপোর্ট নম্বর থেকে শুরু করে সমস্ত নথি নেওয়া হচ্ছে, যাতে সুজয়কে সযত্নে বাড়ি ফেরানো যায়। পরিবার সূত্রে খবর, সুজয় ওখানে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অশোকনগরে সুজয়ের বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা, মা, ছোট বোন, স্ত্রী এবং একমাত্র ছোট্ট কন্যা সন্তান। কান্নাভেজা গলায় সুজয়ের মা বারবার অনুরোধ করেছেন, ছেলে যেন অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ফিরতে পারেন। তাঁরা জানিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের উপর তাঁরা সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে।