বাংলা সিনে ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা খলনায়িকা বলতে প্রথমেই উঠে আসে সংঘমিত্রা ব্যানার্জির নাম। পর্দার অভিনয়ে কূটনৈতিক দিক থেকে পারদর্শী হলেও বাস্তবে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত। বাস্তবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল, হাস্যরসিক রমণী। পর্দার ওই প্রকার কূটনৈতিক অভিনয়ের জন্য সিনেমা চলাকালীন দর্শকদের থেকে নানারকমের খারাপ মন্তব্য এমনকি শাপ-শাপান্তও শুনতে হয়েছে তাঁকে। সংঘমিত্রা ব্যানার্জি যে শুধুমাত্র একজন দক্ষ অভিনেত্রী ছিলেন তা নয়, তিনি ছিলেন বহুগুণসম্পন্নাও। ১৯৫৬ সালের ৮ আগস্ট বেনারসে তাঁর জন্ম হয়।
তাঁর বাবার নাম সুভাষ কুমার মুখার্জি এবং মা ছিলেন সান্তনা মুখার্জি। যখন তাঁর বয়স খুব ছোট, তখন তাঁর বাবা-মা মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন খুব মেধাবী ছাত্রী। স্কুল পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সংস্কৃততে অনার্স পাশ করেন তিনি। এরপর মাস্টার্স করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেই সাথে বাংলা সাহিত্যের ওপর স্পেশাল ডিপ্লোমাও করেছেন সংঘমিত্রা।
তাঁর অভিনয় জগতে আসার একটা কাহিনী আছে। তখনকার দিন মানেই উত্তমকুমারের ছবি প্রতিটা তরুণীর মনেই আঁকা থাকত। সংঘমিত্রাও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। অডিশনে উত্তমকুমারকে দেখার জন্য ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’র সেটে হাজির হন সংঘমিত্রা। তখনই পরিচালকের চোখে পড়েন তিনি। পরিচালক সেইসময় নতুন মুখের খোঁজ করছিলেন। তাঁর জীবনের প্রথম শট ছিল উত্তম কুমারের সঙ্গে। আর তারপর থেকেই টলিউড জগতের দিকে পা বাড়ান সংঘমিত্রা। এরপর ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’ ছবিতে ‘রামজি দাসী সাধিকা’র চরিত্রে তিনি সকলের নজর কাড়েন। বাংলা সিনেমার নামী খলনায়িকা হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি তাঁর।
তারপর এলাহাবাদের জয়ন্ত ব্যানার্জির সাথে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেত্রী। অভিনয়ের পাশাপাশি চুটিয়ে সংসারও করেছেন। মানুষ হিসেবে যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। বিপদে আপদে বহু মানুষের দিকে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমন অভিনেত্রীর শেষ জীবন এতটা দুর্বিষহ হবে তা ভাবা যায়নি। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর আগেই তিনি টলিউড জীবন থেকে অবসর নেন।