ভারতের হয়তো এমন কোন জায়গা নেই যেখানে চোর-ডাকাতের ভয় নেই। স্বাভাবিকভাবেই সেই কারণে মানুষ যখনি বাড়ি থেকে বাইরে বের হয়, তখনই ভালো করে দেখে নেয় ঠিকঠাক দরজা দেওয়া হলো কিনা, ঠিকঠাক তালা দেওয়া হল কিনা। কিন্তু ভারতেরই এমন একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে কিনা নেই কোনো চোর ডাকাতের ভয়।
সেখানকার মানুষ কোনোদিনই এই চিন্তা করে না, যে দরজায় তালা দেওয়া হলো কিনা? দরজা খোলা থাকলো কিনা? এই কথাটা শুনে অবাক হওয়ারই মত তাই না?কিন্তু বিশ্বাস করুন এমনই একটি গ্রাম রয়েছে মহারাষ্ট্র। মহারাষ্ট্রের এই গ্রামের মানুষজন কখনোই এই দুশ্চিন্তায় তারা ভোগে না যে , তাদের বাড়িতে চুরি হতে পারে, এরজন্য দরজা জানালা ভালো মতো আটকে রাখা। কারণ সেইসব বাড়িতে নেই কোনো দরজা।
মহারাষ্ট্র আহমেদনগর জেলার একটি গ্রাম যার নাম শনি শিঙ্গাপুর। এখানকার গ্রামের কোনো মানুষের বাড়িতে নেই দরজা, শুধুমাত্র বাড়ি নয় সেখানকার স্কুল-কলেজ অফিস-আদালত এমনকি ব্যাংকের মধ্যেও নেই কোনো দরজা। এই গ্রামের মানুষদের বিশ্বাস তাদের রক্ষা করবে শনি দেবতা। যদি কেউ চুরি করার মতো ভয়ঙ্কর সাহস দেখায়, তাদের আগামীতে পস্তাতে হবে।এখনো পর্যন্ত এই গ্রামে কোনোদিন চুরি ডাকাতি হয়নি, যার ফলেই এখন গ্রামবাসীদের দৃঢ় বিশ্বাস, আগামীতেও চুরি হবে না।
এই গ্রামের মানুষ শনি দেবতাকে খুব মন থেকে বিশ্বাস করেন। গ্রামের কোন পাবলিক টয়লেটে পর্যন্ত লাগানো নেই কোনো দরজা। এমনকি মহিলাদের জন্যও নেই দরজা, তবে হালকা পর্দার ব্যবহার করা হয়। শোনা যায় এই বিশ্বাস মানুষের মধ্যে আসে ৩০০ বছর আগে থেকে।সেখানে নাকি একটি পুকুড়ে কালো একটি পাথর ভেসে ওঠে আর তাতে আঘাত করতেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তবে পরে যখন শনি দেবতা তাকে ও গ্রামবাসীদের স্বপ্নাদেশ দেয় ,যে এটাই তিনি ও সেটাকে প্রতিষ্ঠা করতে। তারপর থেকেই সেই গ্রামে শনি দেবতার পূজা শুরু হয়।
তবে দেবতা নাকি আদেশ করেন, তাকে রাখা যাবে না কোনো বদ্ধ জায়গায় , তাকে রাখতে হবে একেবারে খোলা আকাশের নিচে, যাতে সহজেই পুরো গ্রামের মানুষকে সে নিজের চোখে দেখতে পারে। এই আদেশের পর থেকেই গ্রামের প্রধান সিদ্ধান্ত নেয় কারো বাড়িতে রাখা হবে না দরজা, পুরোপুরি আস্থা রাখা হয় ভগবান শনির ওপরেই। আর তারপর থেকেই গ্রামবাসীদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে থাকে শনি দেবতা। কেউ যদি নিজে থেকে দরজা লাগিয়েও থাকে, তারপরেই কিছু না কিছু অমঙ্গল ঘটতে থাকে তার সাথে। ব্যাঙ্ক, পুলিশ থানা , সব জায়গাতেই দরজা ছাড়াই সব কিছুর প্রচলন রয়েছে সেই গ্রামে।
কিছুদিন আগেই ইউকো ব্যাঙ্কের শাখা গড়ে ওঠে গ্রামে, সেখানে দরজা লাগানো হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই দরজায় নেই কোনো তালা। অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে এই নিয়ে, সত্যিই কি কোন অপরাধ হয় না সেই গ্রামে? তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হয়তো গ্রামবাসীদের মনে বিশ্বাস এতটাই গাঢ় হয়েছে যে সেটাকে মাথায় রেখেই সেই গ্রামে হয়না কোন অপরাধ মূলক কার্যকলাপ।