বেশ কয়েক বছর আগে ইজরায়েলের জিম প্রশিক্ষক মোহাম্মদ আল শেনবারির একটি ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ এসেছিল যেখানে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল তিনি গৃহস্থালির এক বা একাধিক জিনিসকে অবিশ্বাস্যভাবে একটি বিন্দুতে ব্যালেন্স করতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় লাভ করেছিলেন। সেই খবরটি দেখে পশ্চিমবঙ্গের একটি কলেজের অধ্যাপক ডক্টর প্রিয়দর্শী মজুমদারের প্রবল আগ্রহ জন্ম নেয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ শুরু করেন। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার রকি বায়ুনের বিষয়ে তিনি জানতে পারেন। দুই শিল্পীর কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ঠিক করে ফেলেন তিনি বিশ্বকে দেখাবেন একটি বিন্দুতে কিভাবে গৃহস্থালির জিনিস ব্যালেন্স করে রাখা যায়।
পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্ট একটি অসাধারণ পারফর্মিং আর্ট বা এক কথায় বলা যায় প্রাণায়াম। এটি অথবা একাধিক জিনিস কে একসাথে নিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। এটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ মন এবং হাত নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া। এ শিল্পটির জন্য অতি শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব, দুর্দান্ত পরিমাপ দক্ষতা, ধৈর্য এবং সৃজনশীলতা প্রয়োজন। সবথেকে প্রথমে দরকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কে সঠিক ভাবে বোঝা।
মাধ্যাকর্ষণ এর প্রভাবে যে বস্তুকে পৃথিবী নিজের দিকে আকর্ষণ করে, সেটি একটি বল অথবা টর্ক তৈরি করতে পারে। পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্ট এই টর্ক কে শূন্য করে দিতে পারে। তাই বস্তু অথবা বস্তুর সমষ্টি এই একটি পয়েন্টের উপর উলম্বভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এ শিল্পটি সকলের সামনে উপস্থাপিত করার জন্য প্রথমে পরিকল্পনা করতে হয় কোন বস্তুর সমষ্টিকে একটি বিন্দুতে ধরে রাখা হবে। দক্ষতার স্তরের উপর নির্ভর করে কতগুলি বস্তুকে আপনি একই সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে পারবেন। সঠিকভাবে ব্যালেন্স করা বস্তুগত বা বস্তুর সমষ্টি বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে ঘন্টার পর ঘন্টা একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
এই শিল্পী এখন পারদর্শী হয়ে উঠেছেন নাগেরবাজার এর বাসিন্দা প্রিয়দর্শী বাবু। গৃহস্থালির জিনিসপত্র ব্যালেন্সিং করে চলেছেন এখন তিনি। তার কিছু উল্লেখযোগ্য পয়েন্ট ব্যালেন্সিং হলো, কোল্ড্রিংসের বোতলের মুখে চেয়ার, টেলিভিশন, প্লাস্টিকের সুটকেস, বড় সোফা, কাঠের আলমারিকে ব্যালেন্স করে ধরে রাখা। ডক্টর মজুমদার এরই মধ্যে প্রায় দেড়শ বেশী ব্যালেন্সিং আর্ট তৈরি করে ফেলেছেন। ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান বুক অব রেকর্ডসে তার নাম উঠে গেছে। সর্বাধিক পয়েন্ট ব্যালেন্সিং আর্টের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।