সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

শুধুমাত্র দলের লোক ও ছেলেমেয়েদেরই চাকরি হ’বে, প্র’কা’শ্যে একথাই বলতেন মানিক!

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলো আরো একজন। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য। বর্তমানে তিনি পলাশিপাড়ার বিধায়ক পদে রয়েছেন। তাঁকেই গ্রেফতার করেছে ইডি। কিন্তু কেনো তাঁকে গ্রেফতার করা হলো কিভাবে সে এত কোটি কোটি টাকার সাথে যুক্ত? এই বিষয়ে জানতে হলে একটু গোড়া থেকেই বলতে হয়। এই মানিক ভট্টাচার্য অনেক বছর ধরেই রাজনীতি করছেন।

আগেও অনেকবার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সিপিআইএম পার্থীর কাছে প্রায় ১৬০০ ভোটে হেরে যান তিনি। পরে সে আর টিকিট পায়নি। অনেক পরে অবশেষে ২০২১ সালে পলাশি পাড়ায় প্রথমবারের জন্য বিধায়ক হয়ে আসেন তিনি। তিনি জানান নদীয়ার এই গ্রামেরই ছেলে সে। কিন্তু ২০১১ সালে সেই সময় ভোটে জিততে না পারলেও রাজ্যের তরফে তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু সেখানেও তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক ওঠে।

তাঁর নামে অভিযোগ ওঠে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীনই নাকি ব্যাপক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যাঁরা নিয়োগ দুর্নীতির নেপথ্যে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মানিক অন্যতম বলেও অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তার পরেও তিনি তার পদে ঠিক টিকে ছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষের হয়ে প্রচারে নেমে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন মানিক। মন্তব্য করেন, প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি হবে তৃণমূল কর্মীদের ছেলেমেয়েদেরই।

আরো পড়ুন: দিওয়ালির পর দেশের আ’রো একটি ব’ড় উৎসব হলো হোলি! রইলো রং উৎসবের পু’রো নি’র্ঘ’ন্ট

এর জন্য দরকার হলে তিনি জেলে যাবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সব প্রাথমিক শিক্ষককে অর্পিতার হয়ে প্রচারে নামতেও তিনি আহ্বান জানান। আর তার এই মন্তব্য নিয়েই হইচই পড়ে যায়। একজন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্তা কী ভাবে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন, সে প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। মানিক অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। তবে এরকম নানা অভিযোগের ভিত্তিতে সেহ অবধি তার পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করা হয়।

সম্প্রতি এসএসসি দুর্নীতি মামলার জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হলে যে চার্জশিট ইডি জমা যে কোর্টে সেখানেও তাঁর নাম পাওয়া যায়। চার্জশিটে অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন মানিক। সেই খবর ছিল পার্থর কাছেও। কিন্তু পার্থ এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেননি। ইডি সূত্রে খবর, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিকের মোবাইল বার্তা আদানপ্রদানের প্রমাণ রয়েছে তাদের হাতে।

চার্জশিটেও এর উল্লেখ রয়েছে। বার বার তাঁর নাম উঠে আসছে নানা দুর্নীতি মূলক কাণ্ডে। এই নিয়ে চার্জশিট জমা দেওয়ার পর মানিককে তলব না করা সত্ত্বেও ২১ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি নিজেই ইডি আধিকারিকদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন নথি জমা দিয়ে আসেন বলে সূত্রের খবর। সেই নথি ধরে তদন্ত চলছিল। কিন্তু সেই নথিতে অনেক অসঙ্গতি দেখতে পাওয়া যায়। আর তার জন্যই সোমবার রাতভর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি আধিকারিকরা।

জিজ্ঞাসাবাদ চলার সময় বয়ানে অসঙ্গতি এবং জেরায় অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হয় মানিকের বিরুদ্ধে। শেষে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হল তাঁকে। এর আগেও তাঁর নামে প্রাথমিক শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে মামলা থেকে শুরু করে টেট কাণ্ডে দুর্নীতি সবেতেই নাম জড়িয়েছে তাঁর। কিন্তু তাঁকে ধরা যাচ্ছিল না। হাইকোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সুপ্রিম কোর্ট অবধি যায় সে।

তবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়ে দুর্নীতির রায় স্থগিত রাখলেও টেট নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে টেট মামলায় সিবিআই তদন্ত করার যে নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্ট দিয়েছিল, তাতেও স্থগিতাদেশ দেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত। আর সেই সব কিছুর ভিত্তিতেই তদন্ত চালায় ইডি। আর বর্তমানে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।