রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির জাল যে কত দূর ছড়িয়ে রয়েছে ,তার নাগাল পেতে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে ED ও সিবিআই কে । প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ্যে আসছে একের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য। দুর্নীতির পরিমাণ দেখে চক্ষু চড়কগাছ বিচারপতির।তার কথায় তিনি দুর্নীতির সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসাধু উপায় অবলম্বন করার জন্য ২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিলের দাবি ওঠে । এই দাবি নাকোচ করে, যোগ্য প্রার্থীদের কথা ভাবতে হবে বলেও জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বিচারপতির উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, ‘যোগ্যদের চিহ্নিত করার কি কোনো উপায় আছে ? সব উত্তরপত্র নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যদি পুরো প্যানেল বাতিল করা হয়, তবে যোগ্যদের বক্তব্য আলাদাভাবে শুনতে পারে আদালত।’
অন্যদিকে বিচারপতি জানিয়েছেন, “আদালতের কাছে দুর্নীতির এত তথ্য প্রমাণ আছে যার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে সংগঠিত হওয়া ২০১৬’র নিয়োগ প্রক্রিয়া খারিজ করে দেওয়া যায়। কিন্তু এটা করলে কিছু বৈধভাবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরাও নিজেদের চাকরি হারাবেন। একজন বৈধপ্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা আমি চাই না।দুর্নীতির মহাসমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাচ্ছি । কিন্তু, সমুদ্র থেকে মানিক বেছে তুলতে হবে। ”
প্রসঙ্গত,বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০২২ সালের ২০ মে রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতাকে প্রথম চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। এর পর কম জল ঘোলা হয়নি। নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের নাগপাশে আবদ্ধ হয়েছে শাসক দলের তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রীরা। একের পর এক শুনানিতে শিক্ষক-অশিক্ষকের চাকরি খুইছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক,নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। সর্বমোট হাই কোর্টের নির্দেশে এখনো পর্যন্ত চাকরি খোয়ালেন মোট ৪,৭৮৪ জন।
আরো খবর: এই সুন্দরীরা আ’স’লে সকলেই পুরুষ! এখানে ছো’ট থেকে ব’ড় সকল পুরুষরাই পড়েন মেয়েদের পোশাক!
২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশে এসএসসির গ্রুপ ডি-র ১,৯১১ জন কর্মীর চাকরি যায়। এদের সকলকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর নির্দেশে চাকরি যায় নবম – দশম শ্রেণীর ৬১৮ জন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকের।
পরে আরও ১৫৭ জন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ৯৫২ জনের বিরুদ্ধে অসাধু উপায়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের হয়েছিল হাই কোর্টে।
অভিযোগকারিরা দাবি করেছিল ওএমআর শিট বিকৃতি করে চাকরি পেয়েছিল তারা।বিচারে অভিযোগকারিদের পক্ষে রায় দেয় আদালত এবং ৯৫২ জনের মধ্যে ৮০৫ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতের রায় মেনে ৬১২ জন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকের চাকরির সুপারিশপত্র বাতিল করে স্কুল সার্ভিস কমিশন।
আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুব্রত তালুকদার ও সুপ্রতীম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন ৮০৫ জন বহিষ্কৃত শিক্ষক।ফলে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত কিছুদিন স্থগিত ছিল। পরে সেই মামলার শুনানি হয়।ডিভিশন বেঞ্চ জানায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল থাকবে, সেই রায়ের ওপর কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না।
আরো খবর: UPI-তে লেনদেনের নিয়ম বদলে যাচ্ছে! কাদের দিতে হবে বাড়তি টা’কা? কাদের দিতেই হবে না?
ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে,’ বহিষ্কৃত শিক্ষকদের চাকরি থাকবে কিনা তার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবে কমিশনই।প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব কিছু আইন কানুন রয়েছে। তারা সেই আইন মেনেই চলবে। সেক্ষেত্রে কমিশনের আইন অনুযায়ী যদি শিক্ষকদের বহিষ্কার করা হয়, তাহলে সেটাই শেষ কথা। ‘ ডিভিশন বেঞ্চ-এর এই নির্দেশের পরই কমিশন একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।সেখানে বলা হয়েছে ,এসএসসি নিজেদের আগের সিদ্ধান্তেই বহাল থাকবে।
গত ১০ মার্চ, শুক্রবার গ্রুপ সি’তে কর্মরত ৮৪২ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।হাই কোর্টের নির্দেশে গঠিত বাগ কমিটির সুপারিশের ফলে চাকরি হারান ৯৯০ জন কর্মীর। গত বছরের মে-জুনে গ্রুপ ডি-র ৬০৯ এবং গ্রুপ সি-র ৩৮১ জনকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে এরা অসৎ উপায় অবলম্বন করে চাকরি পেয়েছেন।