ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। কারও জন্য ভালো কিছু করার মনোভাবের পথে কখনো কোনো প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আজীবন এটাই প্রমাণ করে এসেছেন 66 বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা। নাম তার তুলসী মুন্ডা। তিনি নিজে একজন নিরক্ষর মহিলা। তবে হাজার হাজার শিশুকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করছেন তুলসী মুন্ডা। উড়িষ্যার একটি ছোট্ট গ্রাম সেরেন্দার বাসিন্দা এই মহিলার এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছে সরকার।
উপজাতীয় এলাকায় শিক্ষার বিস্তারে অংশগ্রহণ করায় তুলসীকে 2011 সালে ভারত সরকার পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করে। সমাজকল্যাণে কাজের জন্য তিনি 2021 সালে উড়িষ্যা লিভিং লিজেন্ড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তিনি প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সফল হয়েছেন।
উড়িষ্যার যে গ্রামে তিনি থাকেন সেই গ্রামের অধিকাংশ শিশু খনিতে কাজ করত। তুলসী একসময় নিজেও খনিতে কাজ করতেন। 1963 সালে ভূদান আন্দোলনের পদযাত্রা সময় বিনোভা ভাবে উড়িষ্যাতে আসেন। তার সঙ্গে তুলসীর দেখা হয়।
এসময় বিনোভা ভাবের মতাদর্শ তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। তিনি আজীবন তাকে অনুসরণ করে চলার সংকল্প নেন। 1964 সালে নিজের গ্রামে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে শুরু করেন তুলসী। এই কাজে প্রতি পদে পদে বাধা পেতে হয় তাকে। তিনি নিজে নিরক্ষর এবং আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়াতে তার কাছে পরিস্থিতি ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবুও তিনি দমে যাননি।
সেই সময় গ্রামবাসীরা তাদের সন্তানদের খনিতে কাজ করতে পাঠাতেন। তাদের পড়াশোনা শেখাতে চাইতেন না। তুলসী মুন্ডা সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে নৈশ বিদ্যালয় চালু করেন। তখন গ্রামবাসিরা তাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেন এবং শিশুদের পাঠাতে শুরু করেন। পরে গ্রামবাসীদের সাহায্য নিয়ে পাথর কেটে একটি স্কুলের নির্মাণ করে ফেলেন তিনি। নাম হয় আদিবাসী বিকাশ সমিতি বিদ্যালয়। বর্তমানে এই স্কুলে সাত জন শিক্ষক এবং 354 জন ছাত্র রয়েছে। 81 জন শিশুর থাকার ব্যবস্থার জন্য হোস্টেলে রয়েছে।