সৌর ঝড় সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই অভিহিত। এটি যে বৈদ্যুতিক গ্রিডের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে অথবা ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি করতে পারে তাও আমরা সকলে জানি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি মনে করছেন, এই সৌর ঝড় ইন্টারনেট পরিকাঠামোর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সৌর ঝড় এর ফলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইন্টারনেট পরিষেবা। দুর্ভাগ্যবশত একটি বিরাট সৌর ঝড় খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে। গত সপ্তাহে ডেটা কমিউনিকেশন কনফারেন্সে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সঙ্গীতা আবদু যদি এই বিষয়ে তাঁর গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি বলেছেন, স্থানীয় ইন্টারনেট পরিকাঠামোতে যে ফাইবার অপটিক তার ব্যবহার করা হয়, সেগুলির ওপর সৌর ঝড় এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
তবে সমুদ্রের তলা দিয়ে মহাদেশ গুলি কে একে অপরের সঙ্গে যে তরঙ্গ গুলি করে রাখে, সেগুলির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সৌর ঝড় এর। গবেষক জানিয়েছেন, মহাদেশ গুলির অধিকাংশই ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। নিয়মিত বিরতিতে প্রাপ্ত সিগন্যালকে আরো শক্তিশালী করে তোলার জন্য যে রিপিটার গুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি সৌর ঝড় এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সংবেদনশীল। এই নেটওয়ার্কের অধিকাংশ অফলাইনে চলে যেতে পারে সৌর ঝড় হলে। ইন্টারনেট জগতে একটি ব্ল্যাকআউট তৈরি হতে পারে সৌর ঝড় এর ফলে। কোন দেশের ইন্টারনেট পরিষেবা, সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে আসা তার গুলির উপর নির্ভর করে তাই এই তার গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইন্টারনেট পরিষেবা রুপোর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
তিনি আরো জানিয়েছেন, এই বিশ্ব মহামারীর জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। মহামারীর পরেই তিনি আরও বেশি করে এই গবেষণা শুরু করেছেন। কার্যকরভাবে মহামারি মোকাবিলা করার জন্য কোন প্রটোকল ছিলো না কারো কাছে। ইন্টারনেট পরিসেবার ক্ষেত্রে বিষয়টি একইরকম। বর্তমান পরিকাঠামো বড়োসড়ো সৌর ঝড় এর জন্য এখনও প্রস্তুত নয়, তাই ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কতটা হবে তা বোঝার ক্ষমতা এই মুহূর্তে আমাদের নেই। আমাদের কাছে তথ্য একেবারেই কম। এর আগে মাত্র তিনটি গুরুতর সৌর ঝড় এর কথা নথিভূক্ত করা হয়েছে যেগুলি হয়েছে, ১৮৫৯,১৯২১,১৯৮৯ সালে।
১৮৫৯ সালে আজকের দিনের মত বৈদ্যুতিক গ্রিড এর অস্তিত্ব ছিলনা। কিন্তু সৌর ঝড় এর সময় ক্যম্পাসে সূচকগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে দুলেছিল। নিরক্ষরেখা অঞ্চলে অবস্থিত কলম্বিয়া থেকেও অরোরা বোরিয়ালিস দেখা গিয়েছিল, যা শুধুমাত্র মেরু অঞ্চল থেকে দৃশ্যমান হয়। ১৯৮৯ সালে যে সৌর ঝড় ঘটেছিল, তার ফলে কানাডার কুইবেক শহরে কয়েক কোটি পাওয়ার গ্রিড পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। উত্তর-পূর্ব কানাডায় ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। শীঘ্রই এরকমই আরো একটি সৌর ঝড় আসতে চলেছে।
এই সৌর ঝড় বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে কিভাবে প্রভাবিত করে, সেই সম্পর্কে আমাদের মোটামুটি ধারনা থাকলেও সাগরের নিচে ইন্টারনেট পরিষেবা তার গুলির কি অবস্থা হবে, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা মুশকিল। তবে ইন্টারনেট পরিষেবা এমনভাবেই তৈরি করা হয় যাতে একটি পথ ব্যর্থ হলে শীঘ্র অন্য নেটওয়ার্ক চালু করা যায়। সৌর ঝড় ব্যাপক পরিমাণ ইন্টারনেট সংযোগ বিভ্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। অদূর ভবিষ্যতে এই সৌর ঝড় এর ফলে মানব সভ্যতাকে বেশ কয়েকটা দিন ইন্টারনেট ছাড়া থাকতে হবে বলে এখন থেকেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।