সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

পর্যটন’শিল্প খুব একটা উ’ন্ন’ত না হলেও জা’নু’ন আফগানিস্তানে’র ভা’স্ক’র্য, স্থা’প’ত্য, প্রা’কৃ’তিক সৌ’ন্দ’র্য স’ম্প’র্কে

পর্যটনশিল্প খুব একটা উন্নত না হলেও জানুন আফগানিস্তানের ভাস্কর্য, স্থাপত্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে

ভারতের প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি হল দেশের উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত আফগানিস্থান। আফগানিস্থান দেশটির সঙ্গে প্রথম পরিচয় ভূগোল বই-এর মাধ্যমে। আফগানিস্থান মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তালিবানি অত্যাচার, তালিবানি শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে আমেরিকার সেনার দেশ দখল, সেদেশের অশান্তি, বিদেশি সেনাবাহিনীর অত্যাচার, অরাজকতা, রুক্ষতা এবং জেলের ভিতর অপরাধীদের অত্যাচার ইত্যাদি। মনে করা হয়, সে দেশে শান্তি কোনোদিনও পা রাখেনি। সব মিলিয়ে আপাদমস্তক একটি কুখ্যাত দেশ হল আফগানিস্থান।

টিভিতে ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমাটি দেখে প্রথম মনে হয়েছিল এরা হয়তো ‘আলু কাবলিওয়ালা’র কেউ হয়। কিন্তু পরে সেই ভুল ভাঙে। রবি ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ থেকে জানা যায় যে কাবুল নামে একটি জায়গা থেকে যাঁরা ভারতে আসেন তাঁদের বলা হয় ‘কাবুলিওয়ালা’। আর আমরা সকলেই জানি আফগানিস্থানের রাজধানী হল কাবুল। পরে অবশ্য সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের লেখা ‘দেশে বিদেশে’ বই পড়ে কাবুল এবং আফগানিস্থান সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়া পাশাপাশি খবরের কাগজ তো ছিলই, যা সে দেশের অশান্তি সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

কিন্তু এদেশের সবকিছুই যে খারাপ তা কিন্তু নয়, সেদেশের ভাস্কর্য, স্থাপত্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও আছে। কিন্তু হিংসার চাপে পড়ে সেদেশের পর্যটনশিল্প খুব একটা উন্নত নয়। নিরাপত্তার অভাবও রয়েছে। তাই সেখানে পর্যটকরা যেতে রীতিমতো ভয় পান। এখন যা পরিস্থিতি তাতে তো প্রাণ হাতে করে যেতে হবে। তবে এই মুহুর্তে ঘরে বসে বোর হওয়ার থেকে চলুন একটা ভার্চুয়াল ট্যুর না হয় হয়েই যাক।

ব্রোঘিল পাস: আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে রয়েছে ব্রোঘিল পাস। আফগানিস্থানের চিত্রল শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ব্রোঘিল ভ্যালি। এটি একটি জাতীয় উদ্যান। এটি প্রধানত পার্বত্য অঞ্চল। এই এলাকার বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে এখানে পর্যটকরা ভিড় জমান। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ পোলো খেলা, উলের তৈরি নানা পোশাক, হস্তশিল্প, সাবেকি খাবার এবং সংগীত । জাতীয় অভয়ারণ্যের ঘাসের জমি, গাছপালা ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। নানা ধরনের পশু পাখি রয়েছে এই জঙ্গলে।

পামির পর্বতমালা: পামির শব্দের অর্থ মালভূমি। পামির বিশ্বের সর্বোচ্চ মালভূমি। একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। মধ্য এশিয়ার এই মালভূমি বা পামির পর্বতমালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। এটি একটি ইউ আকৃতির উপত্যকা। চারদিকে পর্বত দিয়ে ঘেরা। এটি হিমালয় এবং তিয়ান শান, হিন্দুকুশ, সুলেমান, কুনলুন এবং কারাকোরাম পর্বতের মধ্যে অবস্থিত। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের কাছে এই পামির অঞ্চল দারুণ আকর্ষণীয়। পামিরের কাছেই রয়েছে পামির নদী, জোরকুল হ্রদ, গান্ট নদী, কারাকুল হ্রদ।

বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি: আফগানিস্থানের মধ্যভাগে শহর বামিয়ানে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ছিল। ৫৫ মিটার এবং ৩৫ মিটার উঁচু দুটি বুদ্ধমূর্তিই তার প্রমাণ। মূর্তি দুটি স্থাপিত হয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটার উঁচু পর্বতের গায়ে খোদাই করা অবস্থায় দাঁড়িয়েছিল প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরোনো এই ঐতিহাসিক মূর্তি দুটি। বিশ্বের বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তিগুলির মধ্যে এগুলি অন্যতম। এছাড়াও ঐ অঞ্চলের পর্বতের গায়ে অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট আরও অনেক বুদ্ধ মূর্তি খোদাই দেখতে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের মতে খ্রীস্টিয় তৃতীয় থেকে দশম শতক পর্যন্ত এই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে প্রভাবিত যে বিশেষ ধরনের শিল্পকলা বিকাশ লাভ করেছিল। এগুলি সেই গান্ধার শিল্পেরই উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ইউনেস্কো এই মূর্তিগুলিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তালিবান নেতা মোল্লা মুহম্মদ ওমরের নির্দেশে ২০০১ সালের মার্চ মাসে বড় মূর্তি দুটিকে পাহাড়ের গায়ে ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হয়। পরে জাপান, সুইৎজারল্যান্ড সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উদ্যোগে মূর্তি দুটিকে পুনরায় তৈরি এবং পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে সেই মূর্তি গুলি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

বাগ-এ বাবর: একসময় কাবুলের অধিপতি ছিলেন মোঘল সম্রাট বাবর। তাঁর নির্মিত বাগ-এ বাবর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। অনেক ঐতিহাসিক বলেন এখানেই সম্রাটকে কবর দেওয়া হয়। সম্রাট বাবরের তৈরি এই বাগানের সৌন্দর্য আজও অক্ষুন্ন রয়েছে। তবে শীঘ্রই হয়তো তালিবানি শাসনে এই সৌন্দর্য্যও নষ্ট হয়ে যাবে।

বন্দ-এ-আমির: আফগানিস্থানের রুক্ষ পরিবেশে বন্দ-এ-আমির যেন একটি সবুজ মরীচিকা। বন্দ-এ-আমির জাতীয় উদ্যানের প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৯ সালে। এখানে ছয়টি পার্বত্য হ্রদ রয়েছে। এই হ্রদগুলি হিন্দুকুশ পর্বতমালার প্রায় তিন হাজার মিটার উপরে অবস্থিত। বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে এখানে পর্যটকদের ঘোরার জন্য একেবারে উপযুক্ত। এই সময় এখানকার আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে। সেই সময় পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হয় বন্দ-এ পানির এবং বন্দ-এ ঘোলামন-এর ঘন নীল জল।

সমঙ্গন: প্রাচীনকালে পুরোনো রেশম পথ দিয়ে চলার পথে সমঙ্গন ছিল একটি বিশ্রামাগার শহর। এখানকার তখত্-ই-রুস্তম কৃত্রিম গুহার সারি। আনুমানিক তৃতীয়-চতুর্থ শতাব্দীতে এর নির্মাণ হয়। গুহার ভিতরে ছিল প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ।

হিরাট মিউজিয়াম: আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হিরাট। এখানকার প্রাচীন সংগ্রহশালাটি ধ্বংস হযে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে এই সংগ্রহশালাটি পুনরায় তৈরি হয় । এই সংগ্রহশালায় গেলে আপনি আফগানিস্থানের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবেন । হিরাটের শুক্রবারের মসজিদটিও একটি দর্শনীয় স্থান। তুর্কি, পার্সি এবং মোঘল শিল্পকলায় মোড়া এই মসজিদ।

আফগানিস্তানের এত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে তার হদিস হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। সেই সমস্ত সুন্দর স্থানের বর্ণনা একেবারে দেওয়াও সম্ভব না। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সেই সৌন্দর্য উপলব্ধি করার সুযোগ নেই আমাদের। সেই পুরনো যুগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত হিংসা, সন্ত্রাস দেশের সেই লাবণ্যকে ধূলিস্মাৎ করে দিয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র একের পর এক। এই দাঙ্গা হাঙ্গামার অবসান ঘটুক যদি কখনও সম্ভব হয় এই দেশ না হয় একবার ঘুরেই আসবেন।