সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

শিবলিঙ্গে দুধ কেন ঢা’লা হয়? জেনে নিন পৌরাণিক ও বৈজ্ঞানিক এবং আধ্যাত্মিক কা’র’ণ

শিবরাত্রির দিন অনেকেই‌ দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গের স্নান করান। মনে করা হয় যে এভাবে অর্চনা করলে বাবা মহাদেব সন্তুষ্ট হন। একথাও প্রচলিত আছে যে নিষ্ঠাভরে মেয়েরা যদি শিবরাত্রির ব্রত পালন করে তাহলে শিবের মতো বর পাওয়া যায়। আমাদের দেশে শিবলিঙ্গে দুধ ঢেলে পুজো করার নিয়ম রীতি রয়েছে। কিন্তু শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার অর্থ কী? এ প্রসঙ্গেই আজকের প্রতিবেদন। শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার পৌরাণিক, আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তাহলে দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক আসলে সেগুলি কী।

আধ্যাত্মিক কারণ : মন্দিরের গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়। ভক্তরা যাতে সেই পবিত্র আবহে নিজেদের শুদ্ধ করতে পারে সেই কারণে শিবলিঙ্গে দুধ ঢালা হয়। শিবলিঙ্গ চারপাশের সমস্ত নেগেটিভ এনার্জিকে শোষণ করে চারপাশকে বিশোধন করে বলেই বিশ্বাস রয়েছে হিন্দুধর্মে। তাই এই প্রক্রিয়ায় শিবলিঙ্গ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ও তেজশক্তির বিকিরণ করে। দুধ ও ডাবের জল ঢালার ফলে উষ্ণতা প্রশমন করা হয়। শিবলিঙ্গে অর্পণ করা দুধের বেশ কিছুটা অংশ চরণামৃত রূপে প্রসাদের সাথে বিতরণ করা হয়।

বৈজ্ঞানিক কারণ : শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। মহাদেব যে গরলকে পান করেছিলেন তা বিষাক্ত দুধ হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। প্রাচীন মানুষের এটিই বিশ্বাস ছিল যে বর্ষাকালে দুধের মধ্যে বিষক্রিয়া থাকে, সেজন্য বর্ষাকালে তারা গরুর দুধ পান করত না। বর্ষাকালে দুগ্ধজাত সামগ্রী গ্রহণ করলে বাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং রোগের কবলে পড়ার ঝুঁকি থাকে, তাই শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার রীতি রয়েছে। কারণ বর্ষাকালে গৃহপালিত পশুগুলো ঘাসের সাথে সাথে নানারকম জীবাণু খেয়ে ফেলে। এই জীবাণুগুলো দুধের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এর ফলে গরুর দুধ দূষিত হয়ে পড়ে। এই দূষণের হাত থেকে মুক্তি পেতে শিবলিঙ্গে দুধ অর্পণ করা হয় এবং ভক্তি কামনা করা হয়।

পৌরাণিক কারণ : সমুদ্রমন্থনের সময় সমগ্র বিশ্বকে রক্ষা করতে মহাদেব গরল পান করেছিলেন। সেই কারণে তিনি নীলকন্ঠ নামেও খ্যাত হন। এই গরল গ্রহণের পর তার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন দেবাদিদেবকে এই কুপ্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তারা দেবী আবির্ভূত হন। তিনি শিবের জ্বালা প্রশমন করতে তাকে স্তন্যপান করান। এই কারণেই শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার রীতি রয়েছে।

এ বিষয়ে আরও একটি মত রয়েছে। এইসময় দেবতারা গঙ্গার জল দিয়ে শিবের অভিষেক করেন এবং তাতে মহাদেব সন্তুষ্ট হন। মহাদেবের গরল পানের সময় সাপেরাও সেই বিষের অংশ পান করে নিজেদের দাঁতে ধারণ করতে এগিয়ে এসেছিল। তাই শিবরাত্রিতে ডাবের জল বা দুধ ঢেলে শিবের অভিষেক করে তাঁর প্রতি ভক্তি জানানো হয়।