আজ রামনবমী। গোটা দেশ মেতে উঠেছে রামনবমীর উৎসবে। চৈত্র মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে অর্থাৎ চৈত্র নবরাত্রির শেষ দিনে পালিত হয় রাম নবমী। এই দিন বাঙালিদের বাসন্তী পুজোর নবমী। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে রাম নবমীর দিনই শ্রীরামচন্দ্রের জন্ম হয়।
• শ্রীরামচন্দ্র : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে রামচন্দ্র শ্রীবিষ্ণুর সপ্তম অবতার। ত্রেতা যুগে অযোধ্যার রাজা দশরথ ও রানি কৌশল্যার কোল আলো করে পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। তিনি মর্যাদা পুরুষোত্তম নামেও পরিচিত।
• রাম নবমীর তিথি : চলতি বছরে ১০ এপ্রিল রবিবার রাত ১ টা ২২ মিনিটে রাম নবমী তিথি পড়েছে। সোমবার ১১ এপ্রিল দুপুর ৩ টে ১৬ মিনিট পর্যন্ত এই তিথি স্থায়ী হবে। আর রামজন্মোৎসবের শুভ মুহূর্ত শুরু হবে ১০ এপ্রিল ১১ টা ৬ মিনিটে।
তা শেষ হবে দুপুর ১ টা ৩৯ মিনিটে। রামের জন্ম দুপুর বারোটার পর হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই এই দিন মর্যাদা পুরুষোত্তমের আরাধনা করার জন্য যাঁরা উপবাস পালন করেন, তাঁদের তা করতে হবে দুপুর ১২ টা ৪ মিনিট থেকে। এই শুভ তিথি চলবে ১২ টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত।
• রামায়ণের কথা : সূর্যবংশীয় রাজা দশরথের তিন স্ত্রী কৌশল্যা, কৈকেয়ী এবং সুমিত্রা। কিন্তু তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। এক বর্ষার রাতে শিকারে বেরিয়ে সরযূ নদীর তীরে একটি শব্দ শুনে তাঁর মনে হয় যে কোনও পশু জল পান করছে। রাজা দশরথ শব্দবেধী বাণ ছুঁড়ে আর্তনাদ শোনার পর বুঝতে পারেন যে তিনি নরহত্যা করেছেন!
সেই শিকার ছিলেন অন্ধ পিতামাতার একমাত্র অবলম্বন শ্রবণমুনি। পুত্রের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত ঋষি শাপ দেন দশরথকে যে তাঁরও পুত্রসুখ লাভ হবে না! দশরথকে এই অপুত্রক দশা থেকে উদ্ধার করেন ঋষ্যশৃঙ্গ ঋষি। তিনি পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করলে এক দেবপুরুষ অগ্নি থেকে আবির্ভূত হয়ে চরুপাত্র রাজার হাতে তুলে দেন।
দশরথ তা দুই ভাগে বন্টন করেন কৌশল্যা এবং কৈকেয়ীর মধ্যে। তাঁরা দুজন নিজেদের ভাগ থেকে আবার অর্ধেকটা দেন সুমিত্রাকে। কালক্রমে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের মধ্যাহ্নে কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত, সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ এবং শত্রুঘ্ন জন্মগ্রহণ করেন। এর মধ্যে যেহেতু রাম ছিলেন জ্যেষ্ঠ এবং পূর্ণাবতার, তাই রামের নামে তিথিটি রাম নবমী হিসেবে পরিচিত হয়।
• রাম নবমী পালন : এ রাজ্যে না হলেও উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাম নবমী অত্যন্ত বিশেষ ভাবে পালিত হয়। ভোরবেলা স্নান সেরে পুজো অর্চনা করা হয়। সারাদিন উপবাস পালন করেন অনেকে। অনেক জায়গায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের রাম, লক্ষণ, সীতা সাজিয়ে রথে বসিয়ে শহর পরিক্রমা করা হয়। রামচন্দ্রের ছবি বা মূর্তির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে ক্ষীর নিবেদন করার প্রথাও প্রচলিত আছে।
• রাম নবমীতে কী করবেন : অনেকে আবার এইদিন দরিদ্রদের খাবার ও বস্ত্র দান করেন। অনেক জায়গায় এদিন কন্যা পুজোরও রীতি রয়েছে। কন্যা পুজো উপলক্ষ্যে নয় জন বালিকাকে নিমন্ত্রণ করে তাঁদের পুজো করা হয়। এই নয় বালিকা নয় জন দেবীর রূপ বলে মনে করা হয়। হালুয়া ও পুরীর প্রসাদ নিবেদন করা হয় এই নয় বালিকাকে।