সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

আজব গ্রা’ম! বি’য়ে’র কয়েকদিন পরেই পা’লি’য়ে যা’ন সব নববধূ, কিন্তু কেন?

আমরা যারা সাচ্ছন্দে জীবন যাপন করি, সরকারি সমস্ত পরিষেবা পাই তারা কোনোদিনই অন্যের সমস্যা বুঝতে পারি না। এমন প্রায়ই দেখা যায় রাস্তায় বেরোলে কলের ট্যাপ খোলা। হুর হুর করে জল পড়ছে। এত চারদিকে বলা হচ্ছে প্রচার হচ্ছে জল অপচয় না করতে কিন্তু মানুষ আজও সচেতন নয়। আর এর পরিণাম ভোগ করে অন্য জায়গার মানুষ। যেখানে এমনিই শুষ্ক অঞ্চল। বেশিরভাগ সময়ই খরা লেগে থাকে। সেখানে আরোই জল পাওয়া যায়না।

আর আজকের প্রতিবেদনে সেরকমই একটি জায়গার কথা আলোচনা করবো। যেখানে জলের অভাব এতটাই যে নতুন বিয়ে হয়ে আসা বধূ শুধু মাত্র জলের অভাবের জন্য স্বামী সংসার ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। একজন দুজন নয় সেই গ্রামের বেশিরভাগ বউই বিয়ের পর বেশিদিন এখানে থাকতে পারেন না। যে গ্রামের কথা বলছি তার নাম হলো দান্ডিচি বারি। এটি নাসিক থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে সুরগানা তালুকের ছোট একটি গ্রাম। এখানে গোটা গ্রামে মেরেকেটে ৩০০ জনের বাস।

এখানে যারা পুরুষ মানুষ যারা এখানেই জন্মেছেন তারা অভ্যস্ত কিন্তু নতুন যারা আসেন তাদের খুবই অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ ওয়াঘমারে এ রকমই একটি বিয়ের কথা শুনিয়েছেন, যা মাত্র দু’দিন টিকেছিল। গোবিন্দ জানায় যে, ” ২০১৪ সালে গ্রামের এক জনের বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে মাত্র দু’দিনের জন্য স্থায়ী হয়েছিল। বিয়ের দু’দিনের মাথায় স্বামীর ঘর ছা়ড়েন ওই বধূ। এই ঘটনা লোকমুখে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।”

আরো পড়ুন: সানিয়া-শোয়েবের কি বি’চ্ছে’দ হবেই? এবার সব খু’লে বলেই দিলেন টেনিস তারকার বাবা

আসলে ওই নব বধূ জল আনতে গ্রামের বাকি গৃহবধূদের সঙ্গে পাহাড়ের নীচে গিয়েছিলেন। এক দিন জল আনতে গিয়েই বুঝে গিয়েছিলেন যে, এই গ্রামে বসবাস করা কতটা কঠিন। আর তাই জল নিয়ে আর বাড়ি না ফিরে জলের কলসি ওখানেই বসিয়ে ব্যাপার বাড়ির দিকে পালিয়ে যান। এইরকম ঘটনা এর আগেও হয়েছে আর তাই এই গ্রামের বদনাম ও হয়ে গিয়েছে। কোনো পরিবার তার মেয়ের বিয়ে দিতে চায় না এই গ্রামের ছেলেদের সাথে। দান্ডিচি বারির নাম শুনলেই বিয়ের কথা ভেঙে দেন।

আর তার পিছনে কারণও আছে যথেষ্ট। ওখানকার বাসিন্দা গোবিন্দর থেকেই জানা যায় যে, এই গ্রামের মহিলাদের প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ মার্চ থেকে জুন মাস, দেড় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাহাড়ের নীচে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া একটি নদী থেকে জল আনতে হয়। ওই নদীর গায়ে পাথরের কাছে জল পাওয়া যায় সেই পাথরের ভিতরে বাটি করে জল তুলে পাত্রে ভরতে হয়। জল কমে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় আবার পাথরে জল জমা হলে আবার তারা নিতে পারে।

আর সেই জল নিয়ে গ্রামের মহিলারা দিনে দু’বার পাহাড়ের নীচে জল আনতে যান। ভোর ৪টে থেকে জল আনা শুরু করেন তারা। এক বার জল আনার পর বেলায় আবার জল আনতে যেতে হয়। গ্রীষ্মকালে বেশির ভাগ দিনই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে। সেই গরমেই পাথুরে রাস্তা হেঁটে পেরোতে হয় গ্রামের মহিলাদের। জল নিয়ে ফিরতে ফিরতে তাদের রাত হয়ে যায়। বন্য পশুর ভয়ে মশাল, টর্চ জ্বালিয়ে তাদের বাড়ি ফিরতে হয়।

এতটাই কষ্টকর তাদের জীবন। সেখানের প্রধান জয়রাম ওয়াঘমারে জানিয়েছেন, তিনি অনেক দিন ধরেই গ্রামের মানুষদের জন্য জলের ট্যাঙ্ক বসানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “অনেকে এসে আমাদের কষ্টের ছবি তোলেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করেন না। আমাদের গ্রাম প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে খরায় ভুগছে।”