আমরা সিনেমা প্রেমিক মানুষ। কিন্তু মাঝে মাঝে সিনেমা অথবা সিরিয়ালকে এতটাই ভালবেসে ফেলি আমরা, যে বাস্তব এবং কল্পনার সঙ্গে অমিল খুঁজে পাইনা। বাস্তবে যারা নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে তারাই আমাদের কাছে স্বপ্নের পুরুষ এবং যারা খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন তাদের আমরা কিছুতেই সহ্য করতে পারিনা। কিন্তু আমাদের এই ঘৃণা অনেক সময় অনেক অভিনেতাকে মানসিক অবসাদের দিকে ঠেলে দিয়েছে, এটা হয়তো আমরা বুঝতে পারি না
আজ কথা বলব তেমনই একজন খলনায়ক এর কথা যিনি ৯০ দশকে একের পর এক দুর্দান্ত বাংলা সিনেমা আমাদের উপহার দিয়ে গেছেন। দাপুটে খলনায়ক অথবা লম্পট ছেলে, সর্বক্ষেত্রে তার অসাধারণ অভিনয় আমাদের মুগ্ধ করেছে, তিনি হলেন সৌমিত্র ব্যানার্জি। প্রত্যেক পরিচালকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনি। পর্দায় তাকে দেখলেই দর্শক ঘৃণায় মুখ সরিয়ে নিত। তবে পর্দার সৌমিত্র বাস্তবের সৌমিত্র যে একেবারেই আলাদা ছিল, তা মানুষ কোনোদিন ভাবতে চায়নি। তাই প্রকাশ্যে রাস্তায় অভিনেতাকে দেখে সাধারণ মানুষ রাগে ক্ষোভে ফুঁসতেন। তেমনই একটি অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছিল সৌমিত্র বাবু কে। মেদিনীপুরের দাঁতনে এক অনুষ্ঠান মঞ্চে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন তিনি। একের পর এক তারকা তখন মঞ্চে উঠছেন। কিন্তু সৌমিত্র অন্যান্য তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে উঠতে শুরু হয়ে যায় বেজায় বিতর্ক। দর্শকরা সাফ জানিয়ে দেন, যিনি নায়কের ক্ষতি করেনি, সব সময় নায়িকাদের অত্যাচার করেন, তাকে কোনো ভাবেই বরদাশ্ত করা হবে না এই অনুষ্ঠানে।
আপাতদৃষ্টিতে অপমান মনে হলেও এটি একজন অভিনেতার কাছে কত বড় সম্মান সেটা হয়তো একজন অভিনেতাই জানেন। কিন্তু অভিনেতা খলনায়ক হিসেবে এই সাফল্যে বিশেষ খুশি ছিলেন না। একের পর এক ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় তিনি এতটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে গিয়েছিলেন, কোনদিন নায়কের চরিত্রে সেইভাবে মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি নিজেকে। অভিনেতা জন্ম হয়েছিল পান্ডুয়ার দমদমা গ্রামে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন তিনি। ৮ বছর বয়সেই ফিল্মি ক্যারিয়ারে পদার্পণ করেছিলেন এই অভিনেতা। সুভা এবং দেবতার গ্রাস, ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছিলেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি গানের প্রতি আগ্রহ ছিল তার। তার কণ্ঠে কিশোর কুমারের গান অসাধারণ শুনতে লাগত।
১৯৮২ সালে দেবশ্রী রায় এবং মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে ত্রয়ী সিনেমায় অভিনয় করার পর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সিনেমাটি সুপার হিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু সিনেমার অফার আসতে শুরু হয়ে যায় তার কাছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে বলা হয় তাকে। অভিনেতা ঝুলিতে প্রায় দেড়শ বেশি সফল ছবি রয়েছে। তবুও পছন্দমত চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ তার সারা জীবন থেকে গিয়েছিলো। এই আক্ষেপ আস্তে আস্তে তাকে মদের প্রতি আসক্ত করে তোলে। এইভাবে মাদকাসক্তি তাকে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এইভাবে চলতে চলতে অবশেষে ২০০০ সালে মাত্র ৪৬ বয়সে মৃত্যু হয় তার। তবে আজও তাঁর কাজের মাধ্যমে তিনি সকলের মধ্যে বেঁচে রয়েছেন। আজব মানুষ খলনায়ক হিসেবে সসম্মানে মনে করেন সৌমিত্রবাবুর নাম।