লিখিত কোনো তথ্য না থাকলেও স্বামীর যাবতীয় সব কিছুর ওপর অর্ধেক অধিকার যে স্ত্রীর বর্তায়- সেই তত্ত্বকেই কার্যত সিলমোহর দিল কলকাতা হাই কোর্ট বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে দ্বারস্থ হওয়া এক মহিলার আবেদনে সাড়া দিয়ে। বর্তমানে CESC-র আওতাধীন এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে গেলে আবেদনকারীর পরিচয়পত্রের পাশাপাশি বাড়ির মালিকানাও থাকতে হবে। এমনকি আবেদনকারী যদি ভাড়াবাড়িতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আবেদনের সঙ্গে বাড়িভাড়ার রসিদ ও বাড়ির মালিকের ছাড়পত্র জমা দিতে হবে, যেখানে বলা থাকবে উল্লিখিত ব্যক্তি বিদ্যুৎ সংযোগ নিলে বাড়ির মালিকের কোনোরূপ আপত্তি নেই।
এই নিয়মের জাঁতাকলেই বিপাকে পড়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার এক বাসিন্দা তনুজা বিবি নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গিয়ে এক বিপাকে পড়েন। খাতায় কলমে স্বামীর সঙ্গে এখনও বিচ্ছেদ হয়নি তার। কিন্তু মনোমালিন্যের জেরে এক বাড়িতে তিনি পৃথক থাকেন। ওই বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ তাঁর স্বামীর নামে রয়েছে। তাই স্ত্রীকে সেই বিদ্যুতের ভাগ দিতে রাজি নন স্বামী।
নিজের নামে ওই বাড়িতেই নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য CESC-র কাছে আবেদন করেছিলেন তনুজা বিবি। কিন্তু CESC কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনি যে বাড়িতে থাকেন, ইতিমধ্যেই সেখানে একটি ইলেকট্রিক লাইন রয়েছে। একই বাড়িতে নয়া কানেকশনের জন্য মালিকানা বা বাড়ি ভাড়ার রসিদ প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই তনুজা বিবির পক্ষে এই শর্ত পূরণ করা সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়ে তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের দায়িত্বে মামলাটি উঠলে তনুজার স্বামীর পক্ষের কৌঁসু্লি সায়নী আহমেদ বলেন, “বাড়ি-সহ যাবতীয় সম্পত্তির মালিক স্বামী। এক্ষেত্রে কোনওভাবেই স্ত্রী নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিদার হতে পারেন না। এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন তনুজা বিবির কৌঁসু্লি নির্মলেন্দু বেরা। তিনি বলেন, “স্ত্রী হিসাবে তনুজা বিবিও ওই সম্পত্তির সমান ভাগীদার। সেক্ষেত্রে ওই বাড়িতেই তিনি পৃথক বিদ্যুৎ সংযোগ পেতেই পারেন।” সওয়াল জবাব শোনার পর বিচারপতি বসাক CESC কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনতে চাইলে CESC-র আইনজীবী সুমন ঘোষ জানান, আবেদনকারীকে নতুন কানেকশন দিতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর তনুজা বিবির পক্ষে রায় যায়। বিচারপতি বসাক বলেন, নয়া বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য মালিকানা সংক্রান্ত নথির প্রয়োজন জরুরি। তবে এক্ষেত্রে আবেদনকারীর স্বামী ওই সম্পত্তির মালিক এবং বিবাহ বিচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত তাঁর স্ত্রীর ওই সম্পত্তির উপর অধিকার রয়েছে। সে কারণে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে তনুজা বিবির কোনো বাধা নেই। CESC কর্তৃপক্ষকে বিচারপতি এও নির্দেশ দেন যে, নতুন কানেকশন দিতে কোনো বাধা এলে তারা পুলিশের সাহায্য নিতে পারে।
