সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

আজ কৌশিকী অমাবস্যা, এই নিয়মগুলো মানলেই ভা’গ্যে’র দরজা খু’লে যাবে

আমরা সাধারণত দেখি যেকোনো অমাবস্যা তিথিতে কালী দেবীর পূজা করা হয়। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সকলে যে কালীর পূজা করি সেটাকে দীপাবলি বলে। ঠিক তেমনি ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথিও অতীব মহতী, এই তিথির পরিচিতি কৌশিকী অমাবস্যা নামে। জানা যায়, পুরাণমতে শুম্ভ-নিশুম্ভ বধার্থে দেবী পার্বতীর দেহ থেকে এই তিথিতেই বিনির্গতা হয়েছিলেন দেবী কৌশিকী। আবার, তন্ত্রারাধ্যা, দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাদেবী তারার আবির্ভাবও এই তিথিতেই। সাধকরা এই তিথির জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। বলা হয় এই তিথিতে নিষ্ঠা ভরে যজ্ঞ করলে সিদ্ধিলাভ করা যায় ।

নিজের লক্ষ্যে পৌঁছনো যায় আজ। অন্ধকারকে শুভ খুব একটা কেউ বলেন না। কিন্তু হিন্দুমতে অমাবস্যা তিথির রয়েছে এক বিশেষ গুরুত্ব, যা মোক্ষ অর্জনের সহায়ক। তন্ত্রশাস্ত্রেও তাই অমাবস্যার আঁধারের জয়জয়কার। প্রতি মাসেই অমাবস্যা তিথি পড়লেও তার মধ্যে কয়েকটি মাহাত্ম্যগুণে অপরিসীম পবিত্র তাঁর মধ্যে কৌশিকী অমাবস্যা হলো অন্যতম। কথিত আছে যে, এই দিন আকবরের জন্য হলেও স্বর্গ এবং নরক এই দুইয়েরই দ্বার খুলে যায় আজ।

অবশ্য সবটাই নির্ভর করে এই তিথিতে কৃত যে যার কর্মফলের ওপর। যিনি ভালো কাজ করেছেন তার জন্যে সর্গ দুয়ার খোলা আর যিনি পাপ করেছেন তাঁর জন্য নরক দুয়ার অবশ্যম্ভাবীক। কৌশিকী দেবী তারা অল্পতুষ্টা, কিন্তু তাঁর সাধনা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে করতে হবে তবেই তিনি তুষ্ট হন। যেমন মহাঋষি বশিষ্ঠকে রীতিমতো নিয়ম মেনে তাঁকে সাধনা করতে হয়েছিল তারাপীঠে, তবেই আবির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী। তাই এই কৌশিকী অমাবস্যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কী কী করা উচিত আর কী একেবারেই করা উচিত নয় আসুন জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুন: পুজোর আগেই দা’ম বাড়তে পা’রে পাউরুটির! পকেটে টা’ন পড়বে জনসাধারণের

শুচিতা :- এই দেবীর সাধনার জন্য সবার আগে যেটা করতে হবে সেটা হলো নিজেকে শুদ্ধ করা ও নিজের বাড়ি ঘর আশেপাশের জায়গাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। পারলে সকাল বেলায় স্নান সেরে নিতে হবে। তার পর শুরু করা যাবে দেবীর আরাধনা।

পুষ্প অর্পণ :- দেবীকে পূজা দেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু প্রয়োজন নেই। তাকে সিঁদুর ও জবা ফুল দেবীর পায়ে অর্পণ করুন তাহলেই হবে। চাইলে ওম তারে তুত্তারে তুরে স্বাহা বীজমন্ত্র জপ করতে পারেন।

দ্বীপ দান :- দীপাবলিতে আমরা দ্বীপ জ্বালিয়ে রাখি সন্ধাবেলায় যাতে কোনো অশুভ শক্তি না বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে। বলা হচ্ছে এই দিনও দ্বীপ জ্বালিয়ে রাখার রীতি আছে। এই দিন তিলের তেলের দুটি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা উচিত বাড়ির দরজায়।

খাদ্যে সংযম :- এই দিন তারাপীঠে মাকে দেওয়া হবে মৎস্যভোগ, নিবেদন করা হবে মদ। কিন্তু তন্ত্রে এর রয়েছে দার্শনিক গুরুত্ব। তাই দেবীকে দেওয়া হচ্ছে বলেই আমরা কিন্তু এদিন মাছ বা আমিষ, মদ কোনওটাই গ্রহণ করতে পারব না। যারা উপবাস করতে পারবেন খুব ভালো। না পারলেও নিরামিষ খাওয়া ভালো আজকের দিনে।

শারীরিক সংযম :- পঞ্চ ম-কারের অন্যতম হল মৈথুন। কিন্তু গৃহস্থ বাড়িতেতো আর কেউ তন্ত্রমতে আরাধনা করেন না, তাই এই তিথিতে শারীরিক সংযমে নিজেকে বাঁধতে হবে। শারীরিক কার্যে যুক্তি হাওয়া যাবে না। দৈবাৎ লিপ্ত হলে তা জীবনে বিড়ম্বনা ডেকে আনবে। বলা হয় এই দিন শারীরিক সম্পর্ক হলে গর্ভে সন্তান এলে তার জীবনও হয়ে উঠবে অশুভ।

দূরে যাত্রা করা যাবে না :- আজ রাতে বিশেষ করে গর্ভবতীদের বাইরে না বেরণই ভালো। খুব প্রয়োজনে বেরোলেও তুলসী পাতা সঙ্গে নিয়ে তবেই বেরোনো উচিত।

দুধদান :- বলা হয় আজকের এই রাতে যদি কোনো কুয়ো বা গর্তে যদি দুধ নিবেদন করা হয় তাহলে তাঁর জীবনে অনেক মঙ্গল বয়ে আসে।

শুধু তাই নয় অনেক গোপন আচার ও আছে এই কৌশিকী অমাবস্যায়। জানা যায়, একটি জলশূন্য নারকেল নিয়ে, তাতে একটি ফুটো করে, সেই ফুটোর মধ্যে দিয়ে নারকেলে চিনি ভরে, ফুটো উপরের দিকে রেখে নারকেলটা যদি বাড়ি থেকে কিছু দূরে পুঁতে দেওয়া যায়, তবে জীবন থেকে সমস্ত বাধা দূর হয়।

অসুবিধা হল- এই আচার পালন করতে হবে গোপনে, কেউ দেখে ফেলে লাভ হবে না। তাই অনেক সাবধানতার সাথে রীতি নীতি মেনে এই সাধনা করলে ফল সে পাবেই। এই ভাবেই আজকের দিনটি সকল হিন্দু ধর্মের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে।