Home অফবিট হিন্দু ধ’র্মে কতটা গুরুত্বপূর্ণ “নরক”? কোন পাপের কি শা’স্তি হয় সেখানে?

সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

হিন্দু ধ’র্মে কতটা গুরুত্বপূর্ণ “নরক”? কোন পাপের কি শা’স্তি হয় সেখানে?

রাগ হলে বা দুঃখ হলে সেই সব কারণে মানুষ প্রায়ই মরে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু সে যখন শান্ত মনে চিন্তা করে তখন ভাবে মৃত্যুর পরে মানুষ কোথায় যায়? আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই এক সময়ে স্বর্গ বা নরকের ধারণার উৎপত্তি হয় মনের মধ্যে।

দেবতাদের বসবাস স্বর্গে, আর মনে করা হয় যারা পুণ্যবান তারা মৃত্যুর পর স্বর্গে যান। তাহলে পাপীরা কোথায় যায়? এই প্রশ্নের উত্তরেই জন্ম নেয় নরকের ধারণা। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি নরকের ধারণা খ্রিস্ট, ইসলাম, বৌদ্ধ প্রভৃতি সংস্কৃতিতেও রয়েছে।

‘শতপথ ব্রাহ্মণ’-এ নরকের প্রথম বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। অনুমান, উপনিষদের সময় থেকেই পাপ ও পুণ্যের সম্যক ধারণা গড়ে উঠতে শুরু করে। ভারতে কৃষি-ভিত্তিক সভ্যতা গড়ে ওঠার পাশাপাশি সেই সময় যাযাবরবৃত্তি ছেড়ে নতুন সমাজ-জীবনে প্রবেশ করতে শুরু করেছিল মানুষেরা।

সমাজের উপযোগী নীতিবোধ গড়ে তোলার জন্য পাপ ও পুণ্যের ধারণা একান্ত প্রয়োজন ছিল। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় মৃত্যু-পরবর্তী দশায় শাস্তি বা পুরস্কারের তত্ত্ব ও কর্মফলের ধারণা। হিন্দু পুরাণে বলা হয়েছে নরকের সংখ্যা একাধিক। বিভিন্ন দুষ্কর্মের জন্য বিভিন্ন নরকের বন্দোবস্ত রয়েছে।

আরো পড়ুন: তৃণমূল টিকিট দেওয়ায় বারবার দ’ল বদলু শত্রুঘ্ন সিনহা মমতার ভূ’য়’সী প্রশংসা করলেন!

‘অগ্নি পুরাণ’-এ চারটি নরকের উল্লেখ রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও নরকের সংখ্যা সাত। আবার ‘মনুস্মৃতি’ ও ‘যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি’ অনুসারে নরকের সংখ্যা ২১টি। ‘ভাগবত পুরাণ’ ও ‘বিষ্ণু পুরাণ’ রয়েছে ২৮টি নরকের বর্ণনা। ‘দেবী ভাগবত’ এবং ‘ভাগবত পুরাণ’-এ প্রধান নরকের বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে।

অন্ধকূপ: অন্যের অনিষ্টকারীদের এখানে নিক্ষেপ করা হয়। এই কূপ নিশ্ছিদ্র অন্ধকার এবং এটি বিষাক্ত কীট-পতঙ্গে পূর্ণ।

কুম্ভীপাক: পশুপক্ষীর উপরে অন্যায় অত্যাচারের কারণে পাপীদের এখানে নিয়ে এসে বিশালাকার কুম্ভে ফুটন্ত তৈলে সিদ্ধ করা হয়। আবার দেবতা-বিরোধীদের এখানে শাস্তি প্রদানের কথাও কোনও কোনও পুরাণ থেকে জানা যায়।

তমিস্রা: এই নরক অন্ধকারাচ্ছন্ন, অন্যের সম্পদ, স্ত্রী ও সন্তান অপহরণের জন্য পাপীদের দড়ি দিয়ে বেঁধে অন্ন-জল না দিয়ে যমদূতরা প্রহার করতে থাকে।

অন্ধতমিস্রা: এখানে ঠগ ও প্রবঞ্চকদের স্থান হয়। প্রভূত প্রহার ও অন্যান্য নির্যাতন দ্বারা তাদের অন্ধ করে ফেলা হয়।

কালসূত্র: ব্রহ্মহত্যার কারণে এই নরকবাস নির্দিষ্ট। এখানে তপ্ত তামার টাটে পাপীদের ফেলে রাখা হয়।

অসিপত্রকানন: বেদ-বিরোধীদের এখানে ঠাঁই হয়। এখানকার গাছের পাতাগুলি ধারালো তরবারির মতো। পাপীদের উপরে সগুলি জোরে জোরে নিক্ষিপ্ত হয়।

রৌরব: স্বার্থপর, ঈর্ষাতুর ও মিথ্যাভাষীদের জন্য বরাদ্দ এই নরক। এখানে ‘রুরু’ নামক সর্প-জাতীয় দানবেরা পাপীদের উপরে অকথ্য নির্যাতন চালায়। ‘মহারৌরব’ নামে আরও একটি নরক আছে। যেখানে রুরুরা পাপীদের মাংস খুবলে খায়।

শুকরমুখ: যে সব রাজকর্মচারী নির্দোষ ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়েছেন অথবা কোনও ব্রাহ্মণকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন, তাঁদের নিয়ে এসে যমদূতরা আখমাড়াই কলে পিষতে থাকে।

আরো পড়ুন: রাস্তার দুদিকেই বাড়ি, বিদেশের এই জায়গায় ভৌ’তি’ক কান্ডকারখানা হ’য়ে থাকে! এভাবে কা’বু হয় ভূ’ত

অবীচি: জলশূন্য এই নরকে অসাধু ব্যবসায়ী এবং বিশ্বাসঘাতকদের স্থান হয়। ১০০ যোজন উঁচু পাহাড় থেকে তাদের যমদূতরা ঠেলে ফেলে দেয়। পাথরে পূর্ণ এই শুষ্ক নরকে তারা তৃষ্ণায় কাতরাতে থাকে।

পুৎ বা পুন্নাম: অপুত্রক ব্যক্তিদের এখানে যেতে হয়। কারণ, পুত্র না থাকায়, তাদের পিণ্ডদানের কোনও ব্যবস্থা হয় না। তারা অতৃপ্ত অবস্থায় এখানে নরক যন্ত্রণা ভোগ করে।

সূচিমুখ: সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তিদের এখানে নিয়ে এসে যমদূতরা তাদের শরীরে সূচ প্রবেশ করিয়ে সেলাই করতে থাকে।

শূলপ্রোত: মূলত পশুপক্ষীর প্রতি নির্যাতনের কারণে এখানে পাপীদের শূলে চড়ানো হয়। যমদূতরা সেই অবস্থাতেই তাদের ত্রিশূল দিয়ে নিরন্তর খোঁচাতে থাকে।