সব খবর সরাসরি পড়তে আমাদের WhatsApp  Telegram  Facebook Group যুক্ত হতে ক্লিক করুন

মৃ’ত্যু’কালে রাক্ষসরাজ রাবণ কোন দামি কথাগুলো বলে গিয়েছিলেন?

আমরা রামায়ণে রাম ও রাবণের যুদ্ধের কথা সবাই জানি। মা সীতাকে অপহরণের কারণে এই যুদ্ধ হয়েছিল। রামকে আমরা মহাপুরুষ বলে মনে করি কিন্তু অনেকেই রাবণকে পুরোপুরি জানেন না। রাবণ একজন অত্যন্ত শক্তিশালী, পরাক্রমশালী যোদ্ধা, পরম শিবভক্ত, বেদ জ্ঞানী এবং মহান পণ্ডিত ছিলেন। রামায়ণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় চরিত্র হল লঙ্কারাজ রাবণ। রাজা হলেও রাবণ রাক্ষস বংশের রাজা ছিলেন। লঙ্কাধিপতি দশানন মহারাজ ছিলেন রাবণ।

রামায়ণে যে যুদ্ধের কথা আমরা পাই সেটা মূলত রাম-লক্ষণকে শিক্ষা দিতে রাবণ সীতাকে অপহরণ করেছিলেন। অন্যদিকে সীতাকে হরণ করা নিয়ে উচিত শিক্ষা দিতে রাবণকে বধ করেন রাম। অনেকেই জানেন না যে রাবণ ছিলেন অর্ধব্রাহ্মণ। আবার অর্ধ অসুর। তাঁর পিতা ছিলেন বিশ্বশ্রব, পুলস্ত্য বংশের ঋষি। মাতা ছিলেন কৈকাসি। এছাড়া রাবণের আসল নাম ছিল দাসগ্রীব। তার অর্থ হল দশটি মাথা।

হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি রাবণের জায়গা রয়েছে অন্যান্য শাস্ত্রে ও ধর্মে। যেমন জৈন শাস্ত্রেও রাবণের উল্লেখ্য আছে। জৈন শাস্ত্রে রাবণকে প্রতি-নারায়ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই কারণেই রাবণের নামও জৈন ধর্মের ৬৪ শলাক পুরুষের অন্তর্ভুক্ত। রাবণ একজন যোগী মানুষ ছিলেন। রাবণ ব্রহ্মা বহু বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে ছিলেন।

এছাড়াও, তিনি বহু প্রকার তন্ত্র, সম্মোহন, ইন্দ্রজাল ও জাদুবিদ্যা জানতেন। রাবণেরও এমন একটি বিমান ছিল, যা অন্য কারও কাছে ছিল না। শুধু তাই নয়, রাম ও রাবণের যুদ্ধের শেষে রাবণ পরাজিত হবার পর মৃত্যুশয্যায় রাবণকে দেখিয়ে রাম লক্ষণকে বলেছিলেন রাবণের কাছ থেকে রাজনীতি ও ক্ষমতার জ্ঞান পাওয়ার শিক্ষা নিতে।
রামের কথা শুনে লক্ষণ রাবণের মৃত্যুশয্যার কাছে যান।

রাবণের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে থাকেন কিন্তু রাবণ তাকে কিছুই বলেন না। লক্ষণ দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর ফিরে আসেন। লক্ষ্মণ রামের কাছে ফিরে এসে বললেন, প্রভু! আমি রাবণের কাছে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম, কিন্তু তিনি কি্ছু বললেন না। তখন ভগবান রাম বললেন, কারোর কাছ থেকে জ্ঞান পেতে হলে মাথার কাছে নয়, পায়ের কাছে দাঁড়াতে হবে। এরপর লক্ষ্মণ আবার রাবণের পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন ও মৃত্যুর আগে রাবণ লক্ষ্মণকে যা বলেছিলেন, তা আজও সবাই জানেন।

রাবণ লক্ষ্মণকে বলেছিলেন :-

১. যে কোনও শুভ কাজে বিলম্ব করা উচিত নয়। অন্যদিকে, অশুভ কাজের প্রতি আকর্ষণকে যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তা পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে।

২. নিজের শক্তি ও বীরত্বে এতটা গর্বিত হওয়া বা এমন অন্ধ হওয়া উচিত নয় যে শত্রুকে তুচ্ছ মনে হতে শুরু করে। ভগবান ব্রহ্মার কাছ থেকে বর পেয়েছিলাম যে মানুষ ও বানর ছাড়া কেউ আমাকে হত্যা করতে পারবে না। কিন্তু তা সত্বেও আমি এগুলোকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলাম ও এটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল। যার কারণে আজ আমি মৃত্যুপ্রান্তে শুয়ে আছি।

৩. রাবণের তৃতীয় উপদেশ ছিল, শত্রু ও বন্ধুর মধ্যে বোঝাপড়া থাকতে হবে। অনেক সময় আমরা শত্রুকে আমাদের বন্ধু মনে করি, যারা পরবর্তীকালে আমাদের শত্রু হিসেবেই সামনে আসে। অন্যদিকে, আমরা যাদের শত্রু ভেবে বিচ্ছিন্ন করি, তারাই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। তাই সঠিক মানুষকে জীবনে বেছে নিতে হবে।

৪. এরপর লক্ষ্মণকে জ্ঞান দিয়ে রাবণ বলেছিলেন যে নিজের জীবনের গভীর রহস্য সম্পর্কে কাউকে বলা উচিত নয়। তাহলে সে আপনার যতই কাছের হোক না কেন। কারণ লঙ্কায় থাকাকালীন বিভীষণ আমার শুভাকাঙ্খী ছিলেন এবং রামের আশ্রয়ে গেলে তিনি আমার সর্বনাশের কারণ হয়েছিলেন।

৫. আর রাবণের শেষ উপদেশ ছিল, অন্য কোনো নারীর প্রতি কোনো খারাপ দৃষ্টি রাখা উচিত নয়। কারণ যে ব্যক্তি অপরিচিত নারীর প্রতি কুদৃষ্টি রাখে সেই ধ্বংস হয়ে যায়।

আর তার এই বাণী গুলি শুনেই বোঝা যায় রাবণ কত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। এই কথা গুলি আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত কাজে লাগে। মানুষকে এভাবেই আসলে চেনা যায়। ভগবান শ্রী রাম বুঝেছিলেন রাবণ কত জ্ঞানী একজন আর তাই তিনি তার ভাই লক্ষণকে পাঠিয়ে ছিলেন তার কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করতে।